
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
গারো পাহাড়ের পাদদেশে অচেনা পাখির কলতান আর সবুজের ছায়ায় মিশেছে মানুষের কোলাহল। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে শেরপুরের গজনী অবকাশকেন্দ্রে ঢল নেমেছে তাঁদের। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে ভিড় করেছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঈদ উদ্যাপনে। পর্যটকদের এই আনন্দ-উদ্যাপনে বাধা হতে পারেনি ভ্যাপসা গরম, তপ্ত রোদ।
ঈদুল আজহার চতুর্থ দিনে আজ মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশকেন্দ্র হয়ে ওঠে ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা। ঈদের নামাজের পর থেকেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ে।
গজনী অবকাশকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয় এ পর্যটনকেন্দ্রের যাত্রা। শেরপুর শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এর অবস্থান।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, অবকাশকেন্দ্রটি জুড়ে লাল মাটির উঁচু-নিচু পাহাড়, টিলা, ঝরনা ও গহিন বন। পাহাড়ি ঝরনা ও লেকের সঙ্গে নানা কৃত্রিম স্থাপনা ও ভাস্কর্যের উপস্থিতি-জলপরি, ডাইনোসর, ড্রাগন টানেল, পদ্ম সিঁড়ি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ ও রংধনু ব্রিজ। শিশুদের জন্য আছে চুকুলুপি পার্ক, এক্সপ্রেস ট্রেন, সুপার চেয়ার ও নাগরদোলার মতো রাইড। পর্যটকদের জন্য ওয়াকওয়ে, কেব্ল কার, জিপ লাইনিংয়ের মতো আধুনিক বিনোদনের সুযোগ রাখা হয়েছে এতে। শেরপুর জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নারে তুলে ধরা হয়েছে জেলার ঐতিহ্য ও বিখ্যাত তুলসীমালা চাল। কেন্দ্রটির অন্যতম আকর্ষণ ৮০ বর্গফুট উঁচু টাওয়ার, সেখান থেকে দেখা যায় পুরো গজনীর অপূর্ব দৃশ্য।
গজনী অবকাশকেন্দ্রে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা। ওয়াচ টাওয়ারের টিকিট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। বাস ও ট্রাকের পার্কিংয়ের জন্য ৭০০ টাকা, মিনিবাস ও মিনিট্রাক ৫০০ টাকা, মাইক্রোবাস ৩০০, প্রাইভেট কার ২০০ টাকা। এ ছাড়া পার্ক এবং বিভিন্ন রাইডে চড়তে রাইড ভেদে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হয়।
আজ সকালে গরম ও রোদ উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা গজনীতে ঘুরছিলেন। বিশেষ করে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া শিশুদের জন্য নির্মিত চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কে শিশুরা আনন্দে মেতে ওঠে। পিছিয়ে ছিলেন না অভিভাবকেরাও-ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তাঁরাও অংশ নেন।
শেরপুরের নকলা উপজেলার গৃহিণী মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা পুরো পরিবার ঘুরতে এসেছি। তবে রোদ ও গরম থাকলেও ছেলে-মেয়েদের আনন্দের কোনো কমতি নেই।’
পাশের জামালপুর জেলা থেকে সন্তানদের নিয়ে গজনীতে ঘুরতে এসেছেন রফিক উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটি পেলেই সেখানে সপরিবার ঘুরতে যান।
অবকাশকেন্দ্রের প্রবেশপথে দায়িত্বরত কর্মচারী সেলিম মিয়ার আশা, আস্তে আস্তে দর্শনার্থীদের আগমন বাড়বে। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় আছে বলে জানান ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল-আমীন। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে, তাই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।
নোভা