ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১৬ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হলো লেজার বার্তা, সফল নাসা

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫৬, ১১ জুন ২০২৫

১৬ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হলো লেজার বার্তা, সফল নাসা

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদ বা মঙ্গলের সীমানা ছাড়িয়ে এবার মহাকাশের আরও গভীর থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হল বার্তা—তাও আবার লেজার রশ্মির মাধ্যমে! ১৬ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নাসার পাঠানো এই বার্তা সফলভাবে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত একটি টেলিস্কোপে। এতে মহাকাশ যোগাযোগে নতুন যুগের সূচনা দেখছে বিজ্ঞানীরা।

নাসার এই পরীক্ষাটি ছিল তাদের "Deep Space Optical Communications (DSOC)" প্রকল্পের অংশ, যা মহাকাশে লাইট-ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়। পরীক্ষার নাম রাখা হয়েছে ‘First Light’। শুধু নামেই নয়, এটি সত্যিকার অর্থেই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

কেন রেডিও নয়, লেজার?

এতোদিন মহাকাশযানে তথ্য আদান-প্রদানে রেডিও তরঙ্গই ভরসা ছিল। কিন্তু এতে গতি ও ডেটা বহনের সীমাবদ্ধতা ছিল। লেজার ব্যবস্থায় সেটা অনেকগুণ বেশি। কারণ লেজার রশ্মি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত হওয়ায় এতে শক্তির অপচয় কম, এবং বাইরের হস্তক্ষেপ বা সিগন্যাল বাধার সম্ভাবনাও কমে যায়। এছাড়া, এটি তুলনামূলকভাবে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে—যা স্পেসক্রাফটের জন্য অত্যন্ত জরুরি সুবিধা।

নাসা জানিয়েছে, এই লেজার সিগন্যালকে ফোটনের মাধ্যমে এনকোড করে পাঠানো হয়। পৃথিবীতে সেটি গ্রহণ করেন সুপারকুলডেটেড ডিটেক্টর। কিন্তু বিষয়টি ছিল চরম সূক্ষ্মতা নির্ভর—কারণ, যন্ত্রপাতি এবং টেলিস্কোপ উভয়ই চলছিল ঘণ্টায় হাজার কিলোমিটার গতিতে। এই গতিশীল অবস্থায় সঠিকভাবে সিগন্যাল গ্রহণ করা অনেকটা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে দৌড়ে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে তীর ছুঁড়ার মতো।

সাইক স্পেসক্রাফট থেকে পাঠানো হল সিগন্যাল

এই লেজার সিগন্যাল পাঠিয়েছে Psyche নামের একটি মহাকাশযান, যা বর্তমানে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের একটি ধাতব গ্রহাণু অঞ্চল অভিমুখে যাত্রা করছে। সেখান থেকেই পাঠানো হয় এই ‘লেজার বার্তা’, যা মাত্র ৫০ সেকেন্ডে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।

মূলত ধাতব-সমৃদ্ধ গ্রহাণুর তথ্য সংগ্রহই Psyche’র উদ্দেশ্য। তবে পরীক্ষামূলকভাবে এটি ভবিষ্যতের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পরীক্ষাগার হিসেবেও কাজ করছে।

মঙ্গল মিশনের জন্য নতুন সম্ভাবনা

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে মঙ্গলে অবস্থানরত নভোচারীরা লাইভ ভিডিও কল করতে পারবেন পৃথিবীতে থাকা পরিবার বা মিশন কন্ট্রোল সেন্টারের সঙ্গে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি কেবল যোগাযোগের সুবিধা নয়, বরং মহাকাশে তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা পরামর্শ, রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ারিং ও জরুরি সমন্বয়ের জন্য বিপ্লবী পরিবর্তন আনবে।

নাসার টেকনোলজি ডেমোনস্ট্রেশন বিভাগের পরিচালক ট্রুডি কর্টেস বলেন, “এই অর্জনটা কেবল একটি মাইলফলক নয়, বরং ভবিষ্যতের মহাকাশ-যোগাযোগ কাঠামোর ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।”

মহাজাগতিক ইন্টারনেটের সূচনা?

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ ভবিষ্যতে ‘ইন্টারপ্ল্যানেটারি ইন্টারনেট’-এর ভিত্তি গড়ে তুলবে, যা মঙ্গল, চাঁদ, স্পেস স্টেশন কিংবা দূরবর্তী উপগ্রহ উপনিবেশগুলোকেও যুক্ত করবে একটি সমন্বিত তথ্য আদান-প্রদানের নেটওয়ার্কে।

এক সময় যেভাবে ভিডিও কল বা ওয়্যারলেস ফোন ছিল কল্পনাপ্রবণ চিন্তা, এখন সেভাবেই মহাজাগতিক যোগাযোগও বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

 

সূত্র: https://www.itmag-dz.com/en/trends/a-laser-just-sent-a-message-to-earth-from-16-million-kilometers-away-and-it-worked/

 

 

রাকিব

আরো পড়ুন  

×