
ছবি: সংগৃহীত
আইফোন ৭ থেকে অ্যাপলের হেডফোন জ্যাক সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তটি এই বহুল ব্যবহৃত অডিও কানেক্টরের এক আকস্মিক ও নাটকীয় অবসান ঘটায় (যদিও এখনো কিছু স্মার্টফোনে হেডফোন জ্যাক পাওয়া যায়)। এরপর হয় আপনাকে একটি ভারী ইউএসবি-টু-৩.৫ মিমি অ্যাডাপ্টার নিয়ে ঘুরতে হতো, অথবা তার ছেড়ে দিয়ে বেছে নিতে হতো ওয়্যারলেস এয়ারপডস। যদিও এয়ারপডসের বিস্তৃত ফিচার সেট একে একটি দুর্দান্ত আপগ্রেডে পরিণত করে, তবুও অ্যাপলের এই সিদ্ধান্ত ভোক্তা অডিও যন্ত্রপাতিতে এক নতুন ধারা সূচনা করে, যা দ্রুত ওয়্যারলেস ডিভাইসের দিকে স্থানান্তর ঘটায় এবং ধীরে ধীরে এক শতাব্দী পুরোনো হেডফোন জ্যাকের যুগের অবসান ঘটায়। ১৮৮০-এর দশক থেকেই হেডফোন জ্যাকের বিভিন্ন সংস্করণ চালু আছে, যা আইফোন আবিষ্কারের অনেক আগের কথা। সে সময় ৩.৫ মিমি জ্যাকের দীর্ঘ সংস্করণ ৬.৩৫ মিমি জ্যাক টেলিফোন অপারেটররা কল স্থানান্তরের জন্য ব্যবহার করতেন।
৬.৩৫ মিমি অডিও জ্যাকে সাধারণত একটি রিং এবং টিপের পাশে একটি ইনসুলেটর থাকত, যা একে TRS (টিপ, রিং, স্লিভ) কানেক্টর হিসেবে পরিচিত করায়। আধুনিক ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাকগুলোর অনেকগুলোর গায়ে দুটি রিং এবং ইনসুলেটর থাকে, যাকে TRRS (টিপ, রিং, রিং, স্লিভ) কানেক্টর বলা হয়। এ ছাড়াও TS (টিপ এবং স্লিভ) অডিও জ্যাক আছে, যেগুলোর গায়ে কোনো রিং থাকে না এবং শুধু একটি ইনসুলেটর থাকে। হেডফোন জ্যাকের এই বিন্যাস নির্ধারণ করে তারের মাধ্যমে কেমন অডিও সংক্রমণ হবে।
হেডফোন জ্যাকে রিংগুলো বিভাজকের কাজ করে
হেডফোন জ্যাকের গায়ের রিংগুলো ধাতব সংযোগকারী অংশকে আলাদা করে। এই কারণে, রিংগুলো সাধারণত প্লাস্টিকের মতো অ-পরিবাহী উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, যত বেশি রিং বা বিভাজক থাকবে, জ্যাকটির ফিচারও তত বেশি হবে। তবে TS ও TRS জ্যাক এখনো নির্দিষ্ট কিছু অডিও যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
সবার সহজ সংস্করণ হলো TS অডিও জ্যাক, যেখানে টিপ ও স্লিভ একটি প্লাস্টিক ইনসুলেটরের মাধ্যমে আলাদা থাকে। এই জ্যাকগুলো শুধুমাত্র মনো অডিও সিগন্যাল পাঠাতে পারে এবং সাধারণত ইলেকট্রিক গিটারের মতো যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
TRS কানেক্টরে একটি রিং যোগ করায় এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়: টিপ, রিং এবং স্লিভ। এই বাড়তি অংশের কারণে TRS জ্যাক স্টেরিও অডিও সিগন্যাল পাঠাতে পারে। এর ফলে, বাম ও ডান উভয় ইয়ারফোনে আলাদা সিগন্যাল যায়, যার মাধ্যমে শ্রোতা আরও সমৃদ্ধ অডিও অভিজ্ঞতা পায়।
তৃতীয় ও সবচেয়ে ফিচারসমৃদ্ধ শ্রেণি হলো TRRS কানেক্টর, যেখানে টিপ এবং দুটি রিং মিলে এটি চারটি ভাগে বিভক্ত করে। স্টেরিও অডিও সিগন্যাল পাঠানোর পাশাপাশি, চতুর্থ অংশটি মাইক্রোফোনের ইনপুট গ্রহণ করতে পারে। TRRS কানেক্টর সাধারণত মাইক্রোফোনযুক্ত হেডসেটে ব্যবহৃত হয়, আর TRS কানেক্টর সাধারণত মাইক্রোফোন ছাড়াই হেডফোনে ব্যবহৃত হয়।
হেডফোন জ্যাক এখনো অডিওপ্রেমীদের কাছে প্রিয়
তারযুক্ত হেডফোন ব্যবহারে তার জট পাকানো বিরক্তিকর হলেও, এক সময় এগুলো প্রাথমিক ব্লুটুথ হেডফোনগুলোর তুলনায় অনেক দিক থেকে এগিয়ে ছিল। তারযুক্ত হেডফোন ছিল একদম সহজ — প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে, কোনো জটিল পেয়ারিং প্রক্রিয়া ছাড়াই। বিপরীতে, আগের ব্লুটুথ সংস্করণে চলা হেডফোনের পেয়ারিং প্রক্রিয়া ছিল বেশ ঝামেলার। তারযুক্ত হেডফোনে চার্জ দেয়ার ঝামেলা ছিল না, যেখানে ব্লুটুথ হেডফোন চার্জ শেষ হয়ে যেত খুব অল্প ব্যবহারে এবং অনেক সময় অডিও ল্যাগ দিত। তবে অডিওপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় হতাশা ছিল ব্লুটুথ হেডফোনের কমপ্রেশন ও সিগন্যাল হস্তক্ষেপজনিত অডিও কোয়ালিটির অবনতি। এখনো অনেক হেডফোনে এসব সমস্যা থাকতে পারে, তাই পরবর্তীবার ব্লুটুথ হেডফোন কেনার সময় ভালোভাবে যাচাই করে নেয়া উচিত।
তবে আধুনিক হেডফোন প্রযুক্তিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্লুটুথের ট্রান্সফার স্পিড ও সংযোগের মান অনেক বেড়েছে। তাছাড়া LDAC-এর মতো প্রযুক্তি ওয়্যারলেস ডিভাইসে অডিও কোয়ালিটিকে অনেক উন্নত করেছে কমপ্রেশন আরও দক্ষ করে। তারপরও প্রকৃত অডিওপ্রেমীরা এখনো নির্ভরযোগ্য, নিখুঁত ও কমপ্রেশনবিহীন অডিও অভিজ্ঞতার জন্য তারযুক্ত হেডফোনই পছন্দ করেন। এছাড়া পেশাদার অডিও যন্ত্র, যেমন গিটার বা কি-বোর্ড, এখনো ওয়্যারলেসের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের অডিও জ্যাকের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়।
আবির