
ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গ্রাজে একটি স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে হামলাকারী নিজেও রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে শহরের বিখ্যাত BORG Dreierschutzengasse সেকেন্ডারি স্কুলে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এটিকে অস্ট্রিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ গণগুলিবর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
কী ঘটেছিল?
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে গ্রাজ শহরের স্কুলে গুলি চালানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। হামলাটি হয় স্কুলের দুটি শ্রেণিকক্ষে, যার একটি ছিল হামলাকারীরই প্রাক্তন শ্রেণিকক্ষ। সে পিস্তল ও শটগান নিয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়।
নিহত ও আহত
নিহতদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ৭ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন শিক্ষক। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। ঘটনাস্থলেই আত্মহত্যা করেন সন্দেহভাজন বন্দুকধারী।
হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেছে
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারী একজন ২১ বছর বয়সি প্রাক্তন ছাত্র। একসময় স্কুলে তিনি নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। হামলার পরে তার মরদেহ স্কুলের বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান স্টকার এটিকে “জাতীয় ট্র্যাজেডি” আখ্যা দিয়ে বলেন, “সারা অস্ট্রিয়া আজ শোকাহত। এই দুঃখের কোনো ভাষা নেই।” তিনি তিন দিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন।
রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ফন ডার বেলেন বলেন, “যেসব তরুণ-তরুণী তাদের সম্পূর্ণ জীবন সামনে রেখেছিল, সেইসব প্রাণ নিভে গেল। এই ক্ষতি অপূরণীয়।”
ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা ক্যালাস বলেন, “প্রত্যেক শিশুর নিরাপদে স্কুলে যাওয়া উচিত, ভয়হীনভাবে শিখতে পারা উচিত।”
ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইয়েন বলেন, “স্কুল হচ্ছে আশার প্রতীক, কিন্তু আজ তা পরিণত হয়েছে মৃত্যু ও সহিংসতার স্থানে।”
অতীতের গণহত্যা ও বন্দুক আইন
অস্ট্রিয়ায় অতীতেও কিছু গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তবে এবারকার মতো প্রাণঘাতী কখনোই ছিল না।
২০২০ সালে ভিয়েনায় এক আইএস-সংশ্লিষ্ট হামলায় ৪ জন নিহত হয়
২০১৬ সালে কনসার্টে গুলি চালিয়ে ২ জনকে হত্যা করে নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হয় এক ব্যক্তি
অস্ট্রিয়ায় বন্দুকের মালিকানা তুলনামূলক বেশি—প্রতি ১০০ জনে প্রায় ৩০ জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তবে মেশিনগান ও পাম্প অ্যাকশন গান নিষিদ্ধ এবং লাইসেন্স ছাড়া বন্দুক রাখা অবৈধ।
আল জাজিরার গ্রাজ প্রতিনিধির ভাষায়, “এই ধরণের ঘটনা অস্ট্রিয়াবাসী কেবল আমেরিকা বা জার্মানির মতো দেশে টেলিভিশনে দেখতেন। তারা ভাবতেই পারেননি—এমন একটি বিভীষিকা একদিন তাদের নিজেদের শহরেও নেমে আসবে।”
ফরিদ