
ছবি: সংগৃহীত
প্রোটিন—আজকের দিনে সবচেয়ে আলোচিত পুষ্টি উপাদান। টেলিভিশন বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে খাবারের মোড়ক, ফিটনেস আলোচনায় সর্বত্রই প্রোটিন নিয়ে হইচই। অনেকেই মনে করেন, বেশি প্রোটিন খেলেই শরীর মজবুত হবে কিংবা স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কিন্তু খাবারের সঙ্গে প্রোটিন পাউডার মেশানোর আগে কিংবা পুরো পরিবারকে উচ্চ প্রোটিন ডায়েটে পাঠানোর আগে জানা দরকার—প্রোটিন আসলে কী করে, কাদের বেশি দরকার পড়ে, আর আসলে কতটা খাওয়া যথেষ্ট।
সত্যি কথা হলো, প্রোটিন শুধু ক্রীড়াবিদ বা বডি বিল্ডারদের জন্য নয়। শিশু, কর্মব্যস্ত বাবা-মা থেকে শুরু করে বয়স্কদের শরীরেও এটি নীরবভাবে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি গঠন করে, মেরামত করে, শক্তি জোগায়। নিচে এমন ৫টি তথ্য তুলে ধরা হলো, যেগুলো প্রোটিন নিয়ে আমাদের ভুল ধারণা দূর করতে সহায়ক হবে:
১. শুধু মাংসপেশি নয়, প্রোটিন দরকার প্রতিটি কোষে
প্রোটিন আমাদের দেহের প্রতিটি কোষের অপরিহার্য অংশ। এটি ত্বক মেরামত করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে, এমনকি ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এনজাইম ও নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে।
শিশুদের ক্ষেত্রে প্রোটিন শারীরিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি ভ্রূণের টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। আবার বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রোটিন শরীরের বল ধরে রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।
২. বেশি প্রোটিন মানেই ভালো নয়
প্রতিটি পুষ্টির মতো প্রোটিনেরও নির্দিষ্ট চাহিদা আছে। শরীরে অতিরিক্ত প্রোটিন কোনো “পেশির ভাণ্ডারে” জমা থাকে না। বরং শরীর তা নির্গত করে দেয় বা দীর্ঘদিন অতিরিক্ত গ্রহণে কিডনির ওপর চাপ পড়ে, হাড়ের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ICMR) মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন শরীরের ওজন প্রতি কেজিতে ০.৮ থেকে ১ গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট। অর্থাৎ ৬০ কেজি ওজন হলে দৈনিক ৪৮ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। গর্ভবতী, স্তন্যদায়ী নারী বা শিশুদের চাহিদা কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে পরিমাণ নয়—গুণমান ও নিয়মিততা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৩. উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও যথেষ্ট, তবে স্মার্ট কম্বিনেশন দরকার
যেখানে প্রাণিজ প্রোটিন সব ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড দেয়, উদ্ভিজ্জ উৎসগুলোতে তা সবসময় থাকে না। তবে সঠিকভাবে মিলিয়ে খেলেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেলে। যেমন, ডাল ও ভাত একসঙ্গে খেলেই সম্পূর্ণ প্রোটিন পাওয়া যায়। তেমনই রুটি ও রাজমা একসঙ্গে খেলেও হয়।
শাকাহারীরা যদি খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনেন—শস্য, ডাল, বাদাম, বীজ নিয়মিত রাখেন—তবে কোনো ঘাটতি হয় না।
৪. সবচেয়ে বেশি দরকার শিশু ও কিশোরদের, অথচ ওরাই সবচেয়ে বঞ্চিত
সবচেয়ে দুঃখজনক হলো—যাদের প্রোটিন সবচেয়ে বেশি দরকার, অর্থাৎ শিশুরা ও কিশোর-কিশোরীরা, তারাই অনেক সময় যথেষ্ট পায় না। স্কুলের টিফিনে নুডলস, বিস্কুট বা চিপস বেশি, প্রোটিন কম।
এই ঘাটতি উচ্চতা, মনোযোগ, শক্তি এমনকি মেজাজে প্রভাব ফেলে। ডিম, দুধ, স্প্রাউটস, পনির, ভাজা ছোলা—এমন কিছু সহজ উপাদান দিয়েই ঘাটতি দূর করা সম্ভব।
৫. প্রোটিন পাউডার কোনো ম্যাজিক নয়
সব প্রোটিন পাউডার খারাপ নয়, তবে সবার জন্য নয়। অনেক সময় এসব পাউডারে থাকে লুকানো চিনি, কৃত্রিম উপাদান বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাডিটিভস। চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া এসব নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রাকৃতিক উৎস—ডাল, দই, টোফু, বাদাম, বীজ, মাছ—শুধু প্রোটিন নয়, সাথে থাকে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার। যেমন, ভালোভাবে রান্না করা খিচুড়ি—দামি প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের চেয়েও কার্যকর হতে পারে।
প্রোটিন দরকার, তবে সচেতনভাবে। বয়স, ওজন, কাজের ধরন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে ও উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করলেই শরীর থাকবে সুস্থ ও শক্তিশালী। তাড়াহুড়া নয়, বরং বোঝাপড়া দিয়েই খাবারের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।
আবির