
ছবি: সংগৃহীত
সন্তান যেন ভালো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে, সেটাই প্রতিটি বাবা-মায়ের প্রধান লক্ষ্য। তারা চান তাদের সন্তান সুস্থ, সচেতন ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে সমাজে নিজ অবস্থান গড়ে তুলুক। কিন্তু অনেক সময় নিজের অজান্তেই অভিভাবকরা এমন কিছু আচরণ করে বসেন, যা সন্তানের মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা সবচেয়ে বেশি শেখে পরিবারের পরিবেশ থেকে। তাই বাবা-মায়ের প্রতিটি আচরণই সন্তানের মনে গভীর ছাপ ফেলে। নিচে তুলে ধরা হলো এমন পাঁচটি কাজ, যা অভিভাবকদের কখনও সন্তানের সামনে করা উচিত নয়।
চিৎকার-চেঁচামেচি ও পারিবারিক অশান্তি
সন্তানের সামনে বাবা-মায়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক বা চিৎকার করা অত্যন্ত ক্ষতিকর। শিশুদের মনে এতে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। তারা ভাবতে শুরু করে, যেকোনো সমস্যার সমাধান ঝগড়া বা চেঁচামেচির মাধ্যমে করতে হয়। এমনকি পরবর্তীতে তারাও অভিভাবকদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে পারে।
অন্যের প্রতি অসম্মান বা অপমানজনক মন্তব্য
সন্তানের সামনে অন্য কাউকে নিয়ে কটূক্তি, সমালোচনা বা অপমানজনক কথা বলা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুরা ভাবতে শেখে, অন্যকে ছোট করা বা কটাক্ষ করা একধরনের স্বাভাবিক আচরণ।
অতিরিক্ত ফোন বা ডিভাইস ব্যবহার
পারিবারিক সময় কাটানোর সময় অভিভাবকদের উচিত ফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকা। ক্রমাগত মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুরা মা-বাবার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয় এবং নিজেরাও একই অভ্যাস রপ্ত করে ফেলে। ভবিষ্যতে তাদেরও ডিজিটাল আসক্তির ঝুঁকি বাড়ে।
সন্তানের সমালোচনা করা
ছোট ছোট ভুলে সন্তানকে বারবার দোষারোপ বা অপমান করা তাদের আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। এমন আচরণে তারা হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করে এবং নিজেকে অপূর্ণ মনে করে। প্রশংসা ও উৎসাহের পরিবর্তে শুধুই সমালোচনা শিশুদের মানসিকভাবে ভেঙে দিতে পারে।
পারিবারিক সমস্যা সন্তানের সঙ্গে ভাগাভাগি করা
অর্থনৈতিক চাপ, দাম্পত্য কলহ বা ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তার কথা সন্তানদের সঙ্গে শেয়ার করা কখনই ঠিক নয়। তারা এসব বিষয় বুঝে উঠতে পারে না এবং অযথা মানসিক চাপে পড়ে যায়। এমনকি নিজেরা সমস্যার জন্য দায়ী ভাবতে শুরু করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, সন্তানের সামনে সবসময় ইতিবাচক আচরণ করা এবং নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। পারিবারিক পরিবেশে ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা চর্চা করলেই শিশুদের মননে গড়ে উঠবে সুস্থ সামাজিক মূল্যবোধ।
শিশুরা বড়দের ছায়াতেই শেখে—তাই নিজেকে বদলান, সন্তানকে গড়ার জন্য।
রাকিব