
প্রতিদিনই যেন জনদুর্ভোগের চিত্র। কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জনগণকে সীট্রাক থেকে নেমেই কাদা মাড়িয়ে পাড়ে উঠতে হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত যাত্রী ও পর্যটকদের এই দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
হাতিয়ার ২০ লক্ষাধিক মানুষের জেলা সদর তথা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম সীট্রাক। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এবং হাতিয়া প্রান্ত থেকেও নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রীবাহী সীট্রাক চলাচল করে। প্রতিদিন প্রায় ৯০ শতাংশ যাত্রী এই পথেই পারাপার হন। কিন্তু প্রতি বছর নদীর পলি সরাতে কোটি টাকা খরচ করেও সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। অধিকাংশ সময় যাত্রীদের কাদা মাড়িয়ে জেটিতে উঠতে হয়।
বিশেষ করে ভাটার সময় সমস্যাটি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্পিডবোট, ট্রলার বা অন্যান্য নৌযান সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারে না। ফলে যাত্রীদের ডিঙি নৌকা বা কাদায় হেঁটে উঠতে হয় পাড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েও পার হতে হয় অনেক সময়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নোয়াখালী-হাতিয়ার মেঘনা অংশে খনন কার্যক্রম চালানো হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তা আবার পলিমাটিতে ভরাট হয়ে পড়ে। চেয়ারম্যান ঘাট এবং ওছখালী ঘাট উভয় জায়গাতেই একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
নদী ভরাটের কারণে যাত্রীদের এই দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের।
স্থানীয় বাসিন্দা রাহাত আহমেদ ও রফিকুল ইসলাম বলেন, “সরকার ঘাট থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করলেও যাত্রীদের জন্য কোনো স্থায়ী সমাধান নেয় না। খনন কাজ যেন লোক দেখানো উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ।”
ভাটার সময় স্টিমার ঘাটে যাত্রীদের নামতে দেখা যায় কাদামাটিতে লেপ্টে থাকা ভাঙা সাঁকোর ওপর দিয়ে। অনেকে বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে ডিঙি নৌকা হয়ে পাড়ে উঠছেন। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মাহমুদ হোসেন বলেন, “নিঝুম দ্বীপে হরিণের অভয়ারণ্য দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু হাতিয়া ঘাটে এসে যেভাবে কষ্ট করলাম, তাতে পরিবার নিয়ে আর কখনও আসার ইচ্ছা নেই।”
টাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক শানিল আহসান বলেন, “এ এলাকার মানুষ প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
হাতিয়া স্পিডবোট মালিক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়ে। কিন্তু ঘাটের এই ভরাট সমস্যার কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার হোসেন ও মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “প্রশাসনের কাছে আমরা বারবার ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছি। ঘাট খনন ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণ অসম্ভব।”
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, গত বছর ওছখালী ঘাট এলাকায় প্রায় ১২০০ মিটার এবং চেয়ারম্যান ঘাট সংলগ্ন চানন্দি ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার নদী খনন করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যা ও অতিরিক্ত পলিমাটির কারণে জায়গাগুলো আবারও ভরাট হয়ে গেছে।
তাঁরা আরও বলেন, “চলতি বছর অন্তত ৪ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব হবে।”
সজিব