ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসলামিক দৃষ্টিতে সন্তানের নামকরণ: জানুন করণীয় ও বর্জনীয়

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১০ জুন ২০২৫

ইসলামিক দৃষ্টিতে সন্তানের নামকরণ: জানুন করণীয় ও বর্জনীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

একটি শিশুর জন্মের পর তার নাম রাখা কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি তার পরিচয়, ধর্মীয় পরিচিতি ও ভবিষ্যত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ইসলাম ধর্মে নামকরণকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। কারণ একটি নাম শুধু পরিচয় নয়, বরং এটি ব্যক্তিত্ব, চরিত্র এবং কখনো কখনো মানসিকতাকেও প্রভাবিত করে।

ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, সন্তানের জন্মের তৃতীয় বা সপ্তম দিনে তার জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখার সুন্নত রয়েছে। হাদিস অনুযায়ী, একজন পিতার ওপর সন্তানের অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাকে একটি ভালো নাম দেওয়া এবং সুশিক্ষা প্রদান করা।

নাম নির্বাচনে সচেতনতার অভাব

বর্তমানে অনেক মুসলিম পরিবারে শিশুদের এমন সব নাম রাখা হচ্ছে, যেগুলো থেকে তাদের ধর্মীয় পরিচয় বোঝা যায় না। যেমন—বাবু, খোকা, মানিক, রতন, রাজা, বাদশা, প্রিন্স ইত্যাদি নাম শুধু ধর্মনিরপেক্ষই নয়, বরং অনেক সময় এগুলোর কোনো অর্থই থাকে না। আবার কেউ কেউ প্রকৃতির উপাদান যেমন—আকাশ, সাগর, বর্ষা, হিমেল ইত্যাদি নামও রাখছেন, যা ইসলামিক নামের সংজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

কুরআনিক শব্দ মানেই ইসলামিক নাম নয়

অনেকে আবার পছন্দসই শব্দ কুরআন থেকে নিয়ে নাম রাখছেন—যেমন "জিদনি" বা "ইলমা", যেগুলোর অর্থ হচ্ছে "আমাকে বৃদ্ধি দাও" এবং "জ্ঞান"। এসব শব্দ কুরআনে ব্যবহৃত হলেও এগুলো কোনো নাম নয়, বরং বাক্যের অংশ। তাই কুরআনিক শব্দ ব্যবহার করার আগে একজন অভিজ্ঞ আলেমের কাছে পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

“আব্দ” শব্দের সঠিক ব্যবহার

অনেকেই “আব্দ” (অর্থ: দাস বা বান্দা) শব্দটি ব্যবহারে ভুল করেন। যেমন—“আব্দুল কালাম” নামের অর্থ দাঁড়ায় “বক্তব্যের দাস”, যা ইসলামিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বান্দা শুধুমাত্র আল্লাহর হতে পারে। “আবদুল্লাহ” (আল্লাহর বান্দা) এবং “আবদুর রহমান” (পরম দয়ালুর বান্দা) নাম দুটি হাদিসে আল্লাহর প্রিয় নাম হিসেবে বিবেচিত।

পারিবারিক নামের সংযুক্তি

সন্তানের নামের সাথে পিতার নাম বা বংশের নাম যুক্ত করা ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। এটি পারিবারিক পরিচয় বজায় রাখে এবং কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের ও তাদের পিতার নামেই সম্বোধন করা হবে—এমনটিই হাদিসে বর্ণিত।

কী করণীয়?

১. নাম রাখার আগে অর্থ ও তাৎপর্য যাচাই করুন।
২. অসুন্দর, কঠিন বা নেতিবাচক অর্থবাহী নাম এড়িয়ে চলুন।
৩. বিশ্বস্ত ইসলামি পণ্ডিত বা আলেমের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
৪. শুধুমাত্র ফ্যাশনের কারণে অদ্ভুত বা অর্থহীন নাম রাখা থেকে বিরত থাকুন।
৫. সুন্দর উচ্চারণযোগ্য এবং সহজবোধ্য নাম বেছে নিন।

নাম হলো একজন মানুষের সারাজীবনের সঙ্গী। একটি সুন্দর ও ইসলামসম্মত নাম কেবল একটি পরিচয় নয়, বরং এটি একজন ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের ভিত্তি। তাই মুসলিম অভিভাবকদের উচিৎ এই বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া এবং বাচ্চার জন্য এমন একটি নাম নির্বাচন করা, যা হবে অর্থবহ, সুন্দর, সহজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন।

আলীম

×