ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এপিস্টাইন ফাইল কী? কেন ট্রাম্পকে এই ফাইল এর ভয় দেখাচ্ছেন মাস্ক !

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১০ জুন ২০২৫

এপিস্টাইন ফাইল কী? কেন ট্রাম্পকে এই ফাইল এর ভয় দেখাচ্ছেন মাস্ক !

ছবি:সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ও উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা হয়ে উঠেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব। সপ্তাহখানেক আগে ট্রাম্প প্রশাসনের "দক্ষতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের" নির্বাহী পদ থেকে ইলন মাস্কের পদত্যাগ সেই দ্বন্দ্বের সূচনা মাত্র বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গুঞ্জন উঠেছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত "বিগ বিউটিফুল বিল" বা "ট্রিপল বি" সংস্কার বিল ঘিরেই তাদের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়।

 

 

ইলন মাস্ক বিলটিকে "একটি জঘন্য বিকৃতি" বলে অভিহিত করে বলেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এই অর্থনৈতিক আপত্তির জেরে তিনি ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়ান।

এরপর গতকাল রাতে ওভাল অফিসে বসে ট্রাম্প ইলন মাস্কের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "ইলন থাকুক বা না থাকুক, আমি পেনসিলভেনিয়াতে জিততামই। ইলনের ওপর আমি খুব হতাশ। এই বিলটা ওর থেকে ভালো কেউ জানত না। কিন্তু ওর সমস্যা শুরু হলো যখন জানতে পারলো আমি ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকেল) ম্যান্ডেট কেটে দিচ্ছি।"

 

 

এই বক্তব্যের জবাবে ইলন মাস্ক নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম "এক্স"-এ (সাবেক টুইটার) পাল্টা আক্রমণাত্মক পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, "আমাকে ছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন। ডেমোক্রেটরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়ন্ত্রণ করতো, আর সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা হতো ৫১-৪৯।"

ট্রাম্প এরপর ট্রুথ সোশাল-এ মাস্ককে উদ্দেশ্য করে লিখেন, "ইলন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আমি ওকে পদত্যাগ করতে বলি। আমি ওর ইভি ম্যান্ডেট কেড়ে নেই, যেটা মানুষকে ইলেকট্রিক গাড়ি কিনতে বাধ্য করত। তখনই সে পাগল হয়ে যায়।"

কিন্তু মাস্ক এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি এক ধাক্কায় পুরো বিতর্ককে একটি ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যান। এক বিস্ফোরক পোস্টে মাস্ক লেখেন, "এবার আসল বোমাটা ফেলার সময় এসেছে। @therealdonaldtrump অ্যাপস্টিন ফাইলে আছে। এটাই কারণ যে কেন এই ফাইলগুলো এখনো প্রকাশ করা হয়নি। শুভদিন, ডোনাল্ড জন ট্রাম্প।"

এই পোস্টে মাস্ক সরাসরি অভিযোগ করেন যে, ট্রাম্পের নাম জেফ্রি অ্যাপস্টিন সম্পর্কিত গোপন ফেডারেল ফাইলগুলোতে রয়েছে। জেফ্রি অ্যাপস্টিন ছিলেন একজন বিতর্কিত বিলিয়নিয়ার, যিনি শিশু পাচার ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ২০১৯ সালে জেলে মৃত্যুবরণ করেন।

‘অ্যাপস্টিন ফাইলস’ বলতে বোঝানো হয় সেসব গোপন নথি ও সাক্ষ্যপ্রমাণ যা অ্যাপস্টিনের অপরাধমূলক নেটওয়ার্কে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করে। মাস্ক এরপর একাধিক পোস্টে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগকে সমর্থন করতে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেন, যার মধ্যে একটি ভিডিওতে ট্রাম্পকে অ্যাপস্টিনের সঙ্গে পার্টিতে অংশ নিতে দেখা যায়।

 

 

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত এখন কেবল রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়—এটি হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের জন্যও একটি গুরুতর ইস্যু। অনেকেই বলছেন, যদি মাস্কের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের পথ খুলে দিতে পারে। অপরদিকে, মাস্কের এমন বক্তব্য তার ব্যবসা, বিশেষ করে টেসলা ও স্পেসএক্স-এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই মুহূর্তে পুরো যুক্তরাষ্ট্রের নজর ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্বের ভবিষ্যৎ দিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ শুধু রাজনীতিই নয়, প্রযুক্তি ও অর্থনীতিকেও নাড়া দিতে পারে।
 

ছামিয়া

×