ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিঃশব্দে ধেয়ে আসছে হার্ট অ্যাটাক?এক মাস আগে দেখা দিতে পারে এই ১২টি সতর্ক সংকেত!

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:২১, ১০ জুন ২০২৫

নিঃশব্দে ধেয়ে আসছে হার্ট অ্যাটাক?এক মাস আগে দেখা দিতে পারে এই ১২টি সতর্ক সংকেত!

হার্ট অ্যাটাক সাধারণত হঠাৎ করেই ঘটে বলে মনে করা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই শরীর এক মাস আগে থেকেই কিছু সংকেত দিতে শুরু করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগুলোকে বলা হয় 'প্রোড্রোমাল সিম্পটম' বা আগাম উপসর্গ। অনেকেই এসব উপসর্গকে অন্য কোনও কারণে হয়েছে ভেবে এড়িয়ে যান। অথচ, সময়মতো সতর্ক হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগের এক মাসে কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ অনেকের শরীরে দেখা দেয়। বুকে ব্যাথা থেকে শুরু করে ক্লান্তি, হালকা মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এইসব ছোট ছোট লক্ষণই আসন্ন হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে।

আসুন জেনে নিই এমন ১২টি উপসর্গের কথা, যেগুলো হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগে দেখা দিতে পারে।

১. বুকে ব্যথা

গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ রোগীই হার্ট অ্যাটাকের আগে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথা মাঝেমধ্যে আসে, আবার চলে যায়। কখনও কখনও এটি অতিরিক্ত চাপ বা ব্যস্ততার সময় আরও বেড়ে যেতে পারে।

২. বুকে ভার লাগা বা চেপে ধরা অনুভব

বুকে ভারী লাগা, চেপে ধরা বা টাইট লাগার অনুভূতিও সাধারণ একটি আগাম উপসর্গ। এটি বিশেষ করে হাঁটাচলা বা কিছু করার সময় দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৪৪ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটি দেখা গেছে।

৩. হঠাৎ হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া

হৃদস্পন্দন খুব জোরে বা অনিয়মিতভাবে চললে, সেটাও হতে পারে আসন্ন হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। ৪২ শতাংশ রোগী এই উপসর্গ অনুভব করেছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

৪. শ্বাসকষ্ট

একটু হাঁটাহাঁটিতেই যদি দম নিতে কষ্ট হয়, মনে হয় যেন ফুসফুসে যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছে না তবে সতর্ক হোন। এমন শ্বাসকষ্ট হার্টের সমস্যার প্রথম দিকের লক্ষণ হতে পারে।

৫. বুকে জ্বালাপোড়া

অনেকে এটিকে এসিডিটি ভেবে ভুল করেন। তবে বুকে জ্বালাপোড়া বা বার্নিং সেনসেশন হৃদরোগের লক্ষণও হতে পারে। যদি এই উপসর্গ নিয়মিত হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

৬. অকারণে ক্লান্ত লাগা

ঘুম ঠিকমতো হয়েছে, কাজের চাপও কম তবু যদি অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে সেটিকে অবহেলা করবেন না। অতিরিক্ত ক্লান্তি হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের জটিলতা নির্দেশ করতে পারে।

৭. মাথা ঘোরা বা হালকা হয়ে আসা

সহজভাবে বললে, মাথা ঘোরানো বা অস্থিরতা শরীরে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হচ্ছে তারই লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি আগে কখনও এই সমস্যা না থাকে, তাহলে এটি হার্টের অসুখের প্রাথমিক সতর্কতা হতে পারে।

৮. বমি বমি ভাব বা পেটের সমস্যা

পেট খারাপ, বমি বা বমি বমি ভাব সাধারণত গ্যাস্ট্রিক বা খাবারের সমস্যা মনে হয়। তবে এই উপসর্গগুলোর পেছনেও হার্টের রোগ লুকিয়ে থাকতে পারে, যদি অন্য কোনও কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়।

৯. উদ্বেগ বা অস্থিরতা

গবেষণায় দেখা গেছে, ২৩ শতাংশ রোগীর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের আগের সময়ে অকারণ উদ্বেগ বা অস্থিরতা দেখা গেছে। হৃদরোগের সঙ্গে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের সরাসরি সম্পর্ক আছে বলেই চিকিৎসকরা মনে করেন।

১০. ঘুমের সমস্যা

অকারণে রাত জেগে থাকা, ঘুম ঠিকমতো না হওয়া বা শোয়ার পর দম বন্ধ হয়ে আসার মতো সমস্যা হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এটি অনেক সময় ‘অর্থোপনিয়া’ নামেও পরিচিত যেখানে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।

১১. পা ফুলে যাওয়া

যখন হৃদপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন পা, গোড়ালি বা পায়ের পাতায় পানি জমে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। এটি রক্ত চলাচলে বিঘ্নের কারণে হয়।

১২. শরীরের অন্য অংশে ব্যথা

হার্ট অ্যাটাক মানেই যে শুধু বুকে ব্যথা হবে, তা নয়। অনেক সময় হাত, পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথাও হতে পারে। এই ব্যথাগুলো হার্ট অ্যাটাকের আগেই দেখা দিতে পারে এবং বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেও থাকতে পারে।

নারী ও পুরুষের উপসর্গে পার্থক্য

নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন, বমি বমি ভাব, পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা, হজমে সমস্যা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি। অনেক সময় নারীরা এসব উপসর্গকে অন্য রোগ বলে ভুল করেন, যার ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে দেরি হয়।

কেন আগে থেকেই উপসর্গ দেখা দেয়?

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এর ফলে শরীর বিভিন্নভাবে সংকেত দিতে শুরু করে। হার্টের ধমনীতে চর্বি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান জমে প্লাক তৈরি হয়। এই প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা শেষমেশ রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয় এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটে।

শেষ মুহূর্তে যেসব লক্ষণ আরও জোরালো হয়ে দেখা দেয়

হার্ট অ্যাটাকের ঠিক আগে অনেক সময় কিছু লক্ষণ আরও তীব্রভাবে দেখা দেয়। যেমন: বুকে ব্যথা বা চাপ, শরীর ঘেমে যাওয়া, হালকা মাথা হওয়া, পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট। যদি এসব উপসর্গ একসঙ্গে দেখা দেয়, তবে এক মুহূর্তও দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকের আগেই যদি শরীর সংকেত দেয়, তবে সেটা চিনে নেওয়া জরুরি। বুকে ব্যথা, ভারী লাগা, শ্বাসকষ্ট বা ক্লান্তির মতো উপসর্গ নিয়মিত হলে তা অবহেলা করবেন না। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।

সময়মতো পদক্ষেপ নিন, সাবধান থাকুন কারণ হার্টের বিপদ নীরবে এগিয়ে আসে।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/6kftvrp3

আফরোজা

×