
ছবি:সংগৃহীত
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে জানায়, ভবিষ্যতে ভারত এমন একটি দেশ হয়ে উঠতে পারে যেখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যা বসবাস করবে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে থাকলেও, ভারতের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের তুলনামূলক উচ্চ জন্মহার এই অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৫০ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যা হবে আনুমানিক ১৬৬ কোটি, যার মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা হবে প্রায় ১৩০ কোটি এবং মুসলিম জনসংখ্যা হবে ৩১ কোটি। এর ফলে ২০৫০ সালে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১১ শতাংশ ভারতেই বসবাস করবে। এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫১ সালে ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩ কোটি ৫৪ লাখ, যা ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ কোটি ২০ লাখে। এই সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ৩৮৬ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে হিন্দু জনসংখ্যা ৩০ কোটি থেকে বেড়ে ৯৬ কোটিতে পৌঁছায়, যার বৃদ্ধির হার ২১৮ শতাংশ। একই সময়ে শিখ এবং খ্রিস্টান জনসংখ্যার বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২৩৫ ও ২৩২ শতাংশ।
যদিও মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি, তবে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রজনন হারে লক্ষণীয় হ্রাস ঘটেছে, যা দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীলতার একটি ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৯৯২-৯৩ সালে মুসলিম নারীদের গড় প্রজনন হার ছিল ৪.৪, যা ২০২২ সালে নেমে আসে ২.৩-এ। হিন্দু নারীদের ক্ষেত্রে একই সময়ে প্রজনন হার ৩.৩ থেকে কমে দাঁড়ায় ১.৯-এ। মুসলিম নারীদের মধ্যে এই হ্রাসের হার ৪৭ শতাংশ এবং হিন্দু নারীদের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে মূলত কাজ করছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ, যেমন শিক্ষার অভিগম্যতা, স্বাস্থ্যসেবা ও আয়ের স্তর। এটি কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক আশঙ্কার বিষয় নয়। বরং সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যেই প্রজনন হারের এই পতন প্রমাণ করে যে, দেশ ধীরে ধীরে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সংহত এবং জনসংখ্যাগতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত বহুধর্মীয় হলেও আরও সামাজিকভাবে অভিন্ন ও সংহত একটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলেই আশা করা যায়।
ছামিয়া