
ছবিঃ সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (NIH)-এর দুই হাজারের বেশি বিজ্ঞানী ও কর্মী একজোট হয়ে একটি প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা খাতে বাজেট কাটছাঁট এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
"বেথেসডা ডিক্লারেশন" নামে এই খোলা চিঠিটি NIH পরিচালক জে ভট্টাচার্যর (Jay Bhattacharya) উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে, যেখানে তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো NIH-এর মূল মিশনকে বিপন্ন করছে, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এবং কোটি কোটি ডলারের সরকারি বিনিয়োগের অপচয় হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা যেন রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী বেছে বেছে প্রয়োগ না করা হয়।” তাঁরা আরও দাবি করেছেন, NIH বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে, চলমান প্রকল্পের অর্থ ছাড় বন্ধ রেখেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক মান, অগ্রগতি বা সম্ভাবনার বিচার না করেই একযোগে অনুদান বাতিল করছে।
বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা পুনরায় চালু করা, স্বাধীন পিয়ার রিভিউ (peer review) ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, বরখাস্ত হওয়া NIH কর্মীদের পুনর্বহাল এবং গবেষণার পরোক্ষ খরচে (indirect cost) ১৫ শতাংশের সীমা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।
তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “একটি ৫ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা যখন ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, তখন তা বাতিল করলে ১ মিলিয়ন সাশ্রয় হয় না, বরং ৪ মিলিয়ন ডলার অপচয় হয়।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই ধরনের পদক্ষেপ NIH-এর কার্যকর ব্যয় পরিচালনার উদাহরণ নয়, বরং তা জীবনরক্ষাকারী গবেষণায় ব্যাপক বিপর্যয়ের প্রতিফলন।
NIH-এর এই প্রতিবাদ বিবৃতি এমন এক সময় এসেছে, যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষণা প্রকল্প বাতিল এবং বাজেট সংকোচনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। ইতোমধ্যে একটি মামলায় বিচারক বাদী বিশ্ববিদ্যালয় ও জনস্বাস্থ্য গোষ্ঠীগুলোর দাবি গ্রহণ করে মামলাটি এগিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
ভট্টাচার্যের জবাব:
NIH পরিচালক জে ভট্টাচার্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমি মনে করি বিজ্ঞানে মতপার্থক্য ইতিবাচক হতে পারে। তবে বেথেসডা ডিক্লারেশনে NIH-এর সাম্প্রতিক নীতিমালার কিছু মৌলিক ভুল ব্যাখ্যা রয়েছে।”
তিনি বলেন, এই পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো বিজ্ঞানে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বন্ধ করা নয়, বরং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
তিনি আরও দাবি করেন, NIH এখন পিয়ার রিভিউয়ের মানোন্নয়ন, গবেষণার স্বচ্ছতা ও পুনরাবৃত্তিযোগ্যতা (reproducibility) বৃদ্ধির দিকেই কাজ করছে এবং প্রত্যেক কর্মী বরখাস্তের ঘটনা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পুনর্বহালও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রেক্ষাপট:
NIH শুধুমাত্র বেথেসডার মূল ক্যাম্পাসে নয়, বরং দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিকভাবে অসংখ্য গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা ও অর্থায়ন করে থাকে। সাম্প্রতিক বাজেট কাটছাঁটের ফলে এই বিশাল গবেষণা নেটওয়ার্কের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আলীম