রাশিয়া একটি বৃহৎ বৈশ্বিক সার উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ, যা কৃষক ও খাদ্য উৎপাদকদের উদ্ভিদ ও ফসলের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করতে ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ান তেল ও গ্যাসের আমদানি কমানোর জন্য জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে আসলেও, রাশিয়ান সার আমদানির দিকে তেমন মনোযোগ দেয়নি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান সার আমদানিতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার সার আমদানির অংশ ২০২২ সালে ১৭% থেকে বেড়ে এখন প্রায় ৩০% হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের এক বছরে রাশিয়া থেকে সার আমদানি ৩৩% বেড়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে (€১.৭৫ বিলিয়ন)।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি অনুযায়ী, রাশিয়া ২০২৩ সালে মোট ১৫.৩ বিলিয়ন ডলারের সার রপ্তানি করেছে, যা তাকে বিশ্বের বৃহত্তম সার রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
যদিও এর প্রধান রপ্তানি বাজার ভারত এবং ব্রাজিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৩ সালে রাশিয়ার সার রপ্তানির প্রায় ১৩% শেয়ার গ্রহণ করেছে।
তবে এই মাসের শুরুর দিকে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আমদানি করা সারগুলিতে ৬.৫% শুল্ক আরোপ করার জন্য ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাবকে অনুমোদন দিয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুল্কগুলো ২০২৮ সালের মধ্যে ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন এত রাশিয়ান সার কিনছে?
এটি আংশিকভাবে রাশিয়ার উৎপাদিত সার এবং তা উৎপাদনের পদ্ধতির কারণে ব্যাখ্যা করা যায়। রাশিয়া নাইট্রোজেন-ভিত্তিক বা অজৈব সার উৎপাদনে বিশেষজ্ঞ, যা উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রয়োজন, যা তাদের অন্যান্য ইউরোপীয় প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক কম দামে সার উৎপাদন করতে সক্ষম করে।
বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ নাইট্রোজেন-ভিত্তিক সার ব্যবহার করে, কারণ এটি নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যেমন ফসফরাস এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।
ম্যাক্যালেস্টার কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক উইলিয়াম মোসলে ডাব্লিউ-কে বলেছেন, "রাশিয়া বিশেষভাবে এই চাহিদা পূরণের জন্য সুসজ্জিত কারণ এটি সস্তা গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদন করতে পারে, যা ইউরোপীয় প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক কম খরচে।"
ইউরোপীয় সার খাতের অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, রাশিয়া ইউরোপীয় বাজারে সস্তা সার "ডাম্পিং" করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিকল্প কী?
মোসলে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক পরিকল্পনা দেখায় যে তারা ২০২৮ সালের মধ্যে রাশিয়ান সার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সত্যিই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। "এটি ইউরোপীয় দেশগুলোকে অন্য কোথাও থেকে অজৈব সার আমদানি করতে বাধ্য করবে," তিনি বলেছিলেন, চীন, ওমান, মরক্কো, কানাডা অথবা যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভাব্য বিকল্প বাজার হিসেবে চিহ্নিত করে।
মোসলে বিশ্বাস করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য একটি বিকল্প হতে পারে নিজেদের নাইট্রোজেন-ভিত্তিক সার উৎপাদন করা — যা গ্যাসের প্রয়োজনীয়তার কারণে খুবই ব্যয়বহুল হবে — অথবা গোবর এবং জৈব আবর্জনা থেকে তৈরি জৈব সার ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানো।
তিনি আরও বলেছেন, "এটি আরও টেকসই এবং মাটির জন্য ভাল হবে।"
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করবে?
মোসলে মনে করেন, যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৮ সালের মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী সার শুল্ক আরোপ করে, তবে ধীরে ধীরে রাশিয়ার আমদানি ইউরোপীয় বাজার থেকে সরিয়ে ফেলবে। "২০২৮ সালের মধ্যে শুল্ক এত বেশি হয়ে যাবে যে, এটি রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে অজৈব সার আমদানি করা অর্থনৈতিকভাবে অসম্ভব হবে।"
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাগুলি জুলাই মাসে কার্যকর হবে এবং বিশেষ করে কৃষি পণ্যগুলিকে লক্ষ্য করবে, যেগুলোর প্রতি আগে তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়নি, সেগুলোর মধ্যে সারেরও অন্তর্ভুক্তি থাকবে।
কৃষক ও সার উৎপাদকরা কী খুশি?
ফার্টিলাইজার্স ইউরোপ শিল্প গ্রুপের সভাপতি লিও আল্ডার্স বলেছেন, রাশিয়ার সার আমদানির পরিমাণ বাড়ানো ইউরোপে "ন্যায্য প্রতিযোগিতা বিপর্যস্ত করেছে এবং দেশীয় উৎপাদকদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে" অনেক দিন ধরেই।
তবে, কৃষকদের সংগঠনগুলি সন্তুষ্ট নয়, কারণ তাদের মনে হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান সারের বিকল্প বাস্তবিক এবং সাশ্রয়ী বিকল্প উন্নয়ন করতে যথেষ্ট কাজ করেনি।
Copa এবং Cocega, ইউরোপের দুটি বৃহত্তম কৃষি umbrella সংগঠন, যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সারের সরবরাহ বৈচিত্র্যকরণের জন্য একটি স্পষ্ট কৌশল উপস্থাপন করতে বলেছে। তারা বলেছে, "যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে সারের উপর নির্ভরতা কমাতে চায়, তবে এটি একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং ভবিষ্যত-দৃষ্টি উপস্থাপন করতে হবে।"
"আমরা আর কৃষি খাতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারি না," বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছে।
রাজু
