ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নেতাকর্মী নয়, দেশত্যাগ করতে বলেছিলেন আত্নীয়দের!

প্রকাশিত: ১২:১২, ১২ জুন ২০২৫

নেতাকর্মী নয়, দেশত্যাগ করতে বলেছিলেন আত্নীয়দের!

ছবি:সংগৃহীত

সরকার পতনের ঠিক আগমুহূর্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিকট আত্মীয়দের উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠান বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে এই বার্তায় তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দ্রুত দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেন। এই বার্তার ভিত্তিতে অনেকেই পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন।

 

 

সূত্র মতে, ৩ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা তার পরিবারের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে এক বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে তার সরকার আর বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। ওই বৈঠকের পরপরই তিনি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আত্মীয়দের উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠান, যাতে লেখা ছিল: *"No one stay here"*। অনেকেই এটিকে সরাসরি দেশ ত্যাগের নির্দেশ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন।

একজন প্রবাসী আত্মীয় জানিয়েছেন, ৪ আগস্ট কারফিউ চলাকালেই শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করেন এবং পরে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ লুৎফুর রহমানের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।

 

 

অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত এই সাবেক এমপি বলেন, শেখ হাসিনা দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি আঁচ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করেছিলেন। সেই আতঙ্ক থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠদের জীবন রক্ষার্থে দেশ ত্যাগে নির্দেশ দেন।

এই বার্তা পাওয়ার পর ৩ আগস্ট থেকেই বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা ধাপে ধাপে দেশ ত্যাগ শুরু করেন। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই শেখ হাসিনার মৌখিক নির্দেশ পান। এরপর তাপস দেশে না থেকে সরাসরি সিঙ্গাপুরে ফিরে যান।

সূত্র আরও জানায়, শেখ হাসিনা আত্মীয়দের নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ৫ আগস্ট ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে ভারত চলে যান। সেখান থেকে শেখ রেহানা লন্ডনে চলে যান।

তৎকালীন সরকারের পতনের মাত্র দুই দিন আগে, ৩ আগস্ট, শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একটি জরুরি বৈঠকে অংশ নেন। এতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধানদের পক্ষ থেকে দেশের উত্তাল পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় এবং ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারবেন না। পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের অনুরোধও জানানো হয় বলে সূত্রে দাবি করা হয়।

বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, এবং আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তৎকালীন সরকারের অনেক প্রভাবশালী নেতা—প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য—বিভিন্ন অভিযোগে কারাবন্দি আছেন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করায় তাদের বিরুদ্ধে বড় কোনো আইনি ব্যবস্থা এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত শুধু একজনকে—সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর পুত্র সেরনিয়াবাত মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ, ২০২৪ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার করা হয়।
 

ছামিয়া

×