
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার শক্তিশালী নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবি (ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস)-এর একটি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে, যেখানে চীনকে ‘শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের হাতে আসা আট পৃষ্ঠার এই নথি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা মহলে চীনের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস এবং শঙ্কার বার্তা দিচ্ছে।
নথিতে বলা হয়েছে, চীন বর্তমানে রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। বেইজিং রাশিয়ার বিজ্ঞানী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত, এবং তারা এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করছে যারা অসন্তুষ্ট এবং সেনাবাহিনী কিংবা প্রযুক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নাগাল রাখেন।
ইউক্রেন ও আর্কটিকে চীনের গুপ্তচর তৎপরতা
নথিতে দাবি করা হয়, চীনা গোয়েন্দারা ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রুশ সামরিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এর উদ্দেশ্য—পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহকৃত অস্ত্র বিশ্লেষণ করা এবং আধুনিক যুদ্ধ কৌশল রপ্ত করা। আর্কটিক অঞ্চলেও চীন গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে, যেখানে তারা খনিশিল্প ও বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্রগুলিকে ছদ্মবেশ হিসেবে ব্যবহার করছে।
ভূখণ্ডগত উচ্চাশা ও সীমান্ত ইঙ্গিত
এফএসবির নথিতে আরও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, চীন রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বিরান এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে ভূখণ্ডগত দাবি তুলতে পারে। এসব অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগ এবং কর্মকাণ্ডকে সম্ভাব্য প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
'এন্টেন্ট-৪' নামে গোপন কর্মসূচি চালু
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে আক্রমণের ঠিক তিন দিন আগে রাশিয়া ‘এন্টেন্ট-৪’ নামের একটি নতুন পাল্টা গোয়েন্দা কর্মসূচি চালু করে। প্রকাশ্যে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্বের ঘোষণা থাকলেও, এই কর্মসূচির নাম ও সময়চয়ন রুশ অভ্যন্তরীণ শঙ্কারই প্রতিফলন।
নজরদারি, সন্দেহ ও সম্পর্কের ছায়াযুদ্ধ
নথি অনুযায়ী, চীনা গোয়েন্দারা রাশিয়ায় অবস্থানরত চীনফেরত নাগরিকদের উপর পলিগ্রাফ পরীক্ষার মাধ্যমে নজরদারি চালায় এবং চীনে অবস্থানরত ২০ হাজার রুশ শিক্ষার্থীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে। চীনা নাগরিকের সঙ্গে বিবাহিত রুশ নাগরিকদেরও টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার পেছনে ছায়াযুদ্ধ
রাশিয়া ও চীন প্রকাশ্যে ‘কোনো সীমাবদ্ধতা নেই’ এমন অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিলেও এই নথি বলছে বাস্তবে চলছে গভীর এক গোয়েন্দা যুদ্ধ। "দুই মিত্র রাষ্ট্রের মধ্যে ছায়ার অন্তরালে এক উত্তেজনাপূর্ণ ও ক্রমবর্ধমান গোয়েন্দা যুদ্ধ চলছে"—এমনই মন্তব্য করা হয়েছে ফাঁস হওয়া রিপোর্টে।
যদিও নথিটি নির্দিষ্ট তারিখবিহীন, তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে এটি সম্ভবত ২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে তৈরি করা হয়েছে। যা প্রমাণ করে, দুই দেশের সম্পর্কের ওপর রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তার ছায়া।
ফরিদ