ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফাঁসি হওয়ার পরও বেঁচে গেলেন আসামি, কী সেই রহস্য?

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১১ জুন ২০২৫

ফাঁসি হওয়ার পরও বেঁচে গেলেন আসামি, কী সেই রহস্য?

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হওয়া মানেই অপরাধীর জীবন শেষ। কিন্তু যদি শোনেন, এক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পরও অলৌকিকভাবে বেঁচে ছিলেন এবং সুস্থভাবে ঘর-সংসারও করেছেন—তাহলে সেটা অবিশ্বাস্য শোনালেও, এই ঘটনাটি বাস্তবে ঘটেছে।

১৬২৬ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড এশিয়ারে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এন গ্রেন। কিশোরী বয়সে তিনি স্যার থমাস রিড নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। হঠাৎ এক বসন্তে সেই বাড়ির মালিকের নাতি জেফ্রির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এন গ্রেন। প্রেমের সম্পর্ক একসময় শারীরিক সম্পর্কের দিকে গড়ায় এবং গর্ভবতী হয়ে পড়েন এন। কিন্তু এই সম্পর্ক তার জন্য হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।

একদিন প্রসব ব্যথা শুরু হলে এন বাড়ির পাশে একটি স্টোররুমে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। শিশুটি অপুষ্ট ছিল এবং দুর্বল শরীরে জন্ম নিয়েছিল। তার প্রসব যন্ত্রণার শব্দে বাড়ির অন্যান্য চাকররা ছুটে এসে তাকে সরিয়ে অন্য কক্ষে নিয়ে যান। পরে ওই শিশুটিকে এন-এর অজান্তেই জীবন্ত কবর দিয়ে দেন তারা। পরবর্তীতে এ কথা জানতে পেরে এন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তবে তাকে হুমকি দেওয়া হয়, যেন ঘটনা চেপে যান, নইলে সবাই পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন।

কিন্তু কয়েকদিন পরেই গুজব রটে যায়। তখনকার সমাজে শিশু হত্যাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হতো। বাড়ির মালিক তার নাতিকে বাঁচাতে এন-কে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বিচার ছাড়াই এই হতভাগ্য মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৬৫০ সালের ডিসেম্বর মাসে এন গ্রেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এখানেই এই নাটকের মোড় ঘুরে যায়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কিছুক্ষণ পর তার দেহ ঝুলন্ত অবস্থান থেকে নামিয়ে কফিনে করে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। দায়িত্বে ছিলেন প্রখ্যাত গবেষক ও সার্জন উইলিয়াম পেট্রি। কফিন খোলার পর তিনি আবিষ্কার করেন, এন তখনো নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। অবাক ও স্তম্ভিত হয়ে গেলেও তিনি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করেন। গোপনে এক নার্সের সহায়তায় তিনি এন-এর সেবা করেন।

অবিশ্বাস্যভাবে এক মাসের মধ্যেই এন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। গলায় কিছুটা সমস্যা থাকলেও প্রাণ ফিরে পান তিনি। এরপর এ রহস্য গোপন রাখা সম্ভব হয় না। সংবাদপত্রে উঠে আসে পুরো কাহিনী। উইলিয়াম পেট্রি গণমাধ্যমকে জানান, কীভাবে এন অপরাধী না হয়েও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

নতুন করে মামলাটি আদালতে ওঠে। তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এন-কে নির্দোষ ঘোষণা করে এবং বেকসুর খালাস দেন। নতুন জীবন শুরু করেন এন গ্রেন। তিনি বিয়ে করেন, পরিবার গঠন করেন এবং ১৬৬৫ সালে নিজের চতুর্থ সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করেন।

ফরিদ 

×