
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম (IBM) সম্প্রতি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কোম্পানিটি মানবসম্পদ (Human Resources) বিভাগে কর্মরত প্রায় ৮,০০০ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে, এবং এর পেছনে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার।
আইবিএম জানিয়েছে, এখন থেকে ছুটির আবেদন যাচাই, বেতন ব্যবস্থাপনা, কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্টেশন ইত্যাদি "পুনরাবৃত্তিমূলক" কাজগুলো AskHR নামক একটি এআই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
বর্তমানে আইবিএমের HR বিভাগের ৯৪% রুটিন কাজ এআই সম্পাদন করছে। নথিপত্র, রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট, বেতন হিসাব – এসব এখন ইতিহাস।
আইবিএমের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে তারা বিলিয়ন ডলারের বেশি সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছে এবং ৭০টির বেশি ব্যবসায়িক শাখায় দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এটা এক প্রকার মানবিক বিপর্যয়। কর্মসংস্থান হারানো মানে শুধু চাকরি হারানো নয়, বরং জীবনের নিরাপত্তাও হারানো।
আইবিএমের সিইও অরবিন্দ কৃষ্ণা দাবি করেছেন, “আমরা মানুষের জায়গায় এআই বসাচ্ছি না, বরং কর্মীদের দায়িত্ব পুনঃনির্ধারণ করছি।”
তিনি বলেন, সৃজনশীল কাজ, সমালোচনামূলক চিন্তা, মানবিক দক্ষতা, এবং সফটওয়্যার, মার্কেটিং ও সেলস বিভাগে এখনো মানুষই কাজ করছেন এবং সেখানে নতুন নিয়োগও চলছে।
আইবিএমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় একটি হাইব্রিড মডেল রয়েছে – যেখানে এআই শুধুমাত্র প্রশাসনিক এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করবে, আর মানুষ থাকবে কৌশলগত, বিশ্লেষণভিত্তিক কাজে।
আইবিএমের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি আসলে একটি সতর্কবার্তা – ভবিষ্যতের কর্মবাজারে এআইই আধিপত্য বিস্তার করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজ হারানো মানুষদের জন্য বিকল্প না থাকলে সামাজিক কাঠামো বিপর্যস্ত হতে পারে। আমরা যদি এমন এক পৃথিবীতে প্রবেশ করি, যেখানে মানুষের শ্রম আর প্রয়োজন হয় না, তাহলে “মানবতা কোথায় দাঁড়াবে?”
যদিও কোম্পানিগুলো বলছে, এআই মানুষকে সাহায্য করার জন্য, বাস্তবতা বলছে অন্য কথা – ইতিমধ্যেই ৮,০০০ পরিবার তাদের জীবনের ছন্দ হারিয়েছে।
প্রশ্ন রয়ে যায়, প্রযুক্তির এই রূপান্তর কি একটি সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সাহায্য করবে, নাকি কর্মসংস্থানের নতুন সংকটের সূচনা করবে?
নোভা