ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

জে-১০সি ‘ভিগোরাস ড্রাগন’: আধুনিক যুদ্ধবিমানে চীনা শক্তির প্রতিচ্ছবি

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ১১ মে ২০২৫

জে-১০সি ‘ভিগোরাস ড্রাগন’: আধুনিক যুদ্ধবিমানে চীনা শক্তির প্রতিচ্ছবি

ছবি : সংগৃহীত

জে-১০ ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ একটি মাঝারি ওজনের, একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট, বহুমুখী যুদ্ধবিমান, যা ডেল্টা উইং ও ক্যানার্ড ডিজাইন ব্যবহার করে। এটি চেংডু এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশন (সিএসি) কর্তৃক তৈরি, এবং ব্যবহৃত হয় পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ), পাকিস্তান এয়ার ফোর্স (পিএএফ) এবং পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভাল এয়ার ফোর্স (পিএলএএনএএফ)-এর দ্বারা।

মূলত আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধের জন্য নির্মিত হলেও,  এটি আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার কাজেও দক্ষ।

পাকিস্তান-ভারতের সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রথমবারের মতো যুদ্ধে অংশ নেয় চীনের তৈরি এই জে-১০সি ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ ফাইটার জেট।

২০০৪ সালে প্রাথমিকভাবে জে-১০ চালু হলেও, জে-১০সি সংস্করণটি প্রযুক্তিগত ও সামরিক দিক থেকে অনেক উন্নত। এটি পশ্চিমা বিশ্বের এফ-১৬-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য। এই ফাইটার জেটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো— ক্যানার্ড-ডেল্টা উইং ডিজাইন। এটি ককপিটের ঠিক পেছনে দুটি ছোট পাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা বিমানটির নিয়ন্ত্রণ ও গতি বাড়িয়ে দেয়। 

এই অত্যাধুনিক চীনা যুদ্ধবিমানে ১১টি অস্ত্র বহনের জায়গা রয়েছে— বডিতে ৫টি এবং প্রতিটি ডানায় ৩টি করে। এটি বহন করতে পারে আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য চীনা ক্ষেপণাস্ত্র পিএল-৮, পিএল-১১, পিএল-১২, পিএল-১৫ এবং রাশিয়ান R-73 ও R-77। এছাড়া আকাশ থেকে ভূমিতে হামলার জন্য এটি ৫০০ কেজির ৬টি পর্যন্ত বোমা বা রকেট এবং একটি ২৩ মিমি কামান বহন করতে সক্ষম।

জে-১০সি-তে রয়েছে AESA (Active Electronically Scanned Array) রাডার, যা একসাথে ১০টি লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করে ৪টি লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ করতে পারে প্রায় ১০০ কিমি দূর থেকে। ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং লেজার-গাইডেড পড প্রযুক্তি এই ফাইটার জেটকে শত্রুর রাডার থেকে আড়াল রাখতে এবং নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সহায়তা করে।

২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তানের জে-১০সি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি প্রথমবারের মতো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম এখন চীন থেকে আসে, যার ফলে জে-১০সি অন্তর্ভুক্তি তাদের বিমানবাহিনীকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করেছে।

জে-১০ যুদ্ধবিমানের প্রাথমিক সংস্করণগুলোতে ছিল রাশিয়ান এএল-৩১ ইঞ্জিন, যা এসইউ-২৭-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জে-১০সি যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে চীনের তৈরি ডব্লিউএস-১০বি ইঞ্জিন, যা পারফরম্যান্সে উন্নত এবং চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতিফলন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জে-১০সি অনেকাংশেই অত্যাধুনিক এফ-১৬-এর মতো এবং এর পিএল-১৫ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে। এই সাফল্যে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফ্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম এক সপ্তাহে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

মূলত জে-১০সি একসময় ‘নকল’ বা অন্য ফাইটার জেট থেকে ‘অনুপ্রাণিত’ ডিজাইন হিসেবে সমালোচিত হলেও এখন এটি প্রমাণ করেছে যে— এটি আধুনিক, কার্যকর এবং চীন-নির্মিত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান।

যদিও ডিজাইনে মিরাজের প্রভাব আছে, এর ক্যানার্ড-ডেল্টা স্ট্রাকচার, নিজস্ব ইঞ্জিন, উন্নত রাডার ও অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি নিজস্ব পরিচয় তৈরি করে নিয়েছে।

 

 

সা/ই

×