ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

বিডি সাইক্লিস্টের ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

বিডি সাইক্লিস্টের ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’

ইচ্ছাটা আয়োজকদের অন্তরে বেশ আগে থেকেই ছিল। শেষ পর্যন্ত বিজয় দিবসে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। অতঃপর সেটা সত্যি হয়েছে। একই লাইনে সবচেয়ে বেশি চলন্ত সাইকেলের সারি করে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছে বিডি সাইক্লিস্টস। বাংলাদেশী সাইক্লিস্টস (বিডিসাইক্লিস্টস) একটি বাংলাদেশী সাইক্লিং সংগঠন। মোজাম্মেল হক এবং তার বন্ধুরা ২০১১ সালের মে মাসে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি সাইক্লিং কমিউনিটি। বিডিসাইক্লিস্টসের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সাইক্লিংকে জনপ্রিয় করা, বিশেষ করে ঢাকা শহরে সাইক্লিংকে যাতায়াতের একটি মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় করা যাতে এখানে দূষণ এবং যানজট রোধ পায়।এই সংগঠনটির মটো হচ্ছে-আনন্দ, বিনোদন এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য সাইক্লিং করা। সাইকেলে মাধ্যমে যানজট নিরসন করা সম্ভব এ এটি একটি কার্যকর উপায় হতে পারে বলে সংগঠনরে সদস্যরা মনে করেন। বিডিসাইক্লিস্টস তাদের সকল রাইডে সেফটি গিয়ারস যেমন হেলমেট ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে, সেফ সাইক্লিং প্রমোট করে থাকে। গিনেস বুকে নাম লেখাতে মহান বিজয় দিবসে সাইক্লিংয়ের আয়োজন করেছিল ‘বিডি সাইক্লিস্ট’ নামের একটি বাংলাদেশি গ্রুপ। ‘লংগেস্ট সিংগেল লাইন অব বাইসাইকেল মুভিং’ ক্যাটাগরিতে নতুন রেকর্ড গড়তে সাইক্লিংয়ে অংশ নেন বাংলাদেশের ১ হাজার ১৮৬ সাইক্লিস্ট। অবশেষে এক লেনে বাংলাদেশের ১ হাজার ১৮৬ সাইক্লিস্টের সাইকেল চালানোর বিশ্ব রেকর্ডটির স্বীকৃতি দিল ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’। বিজয় দিবসের সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের পেছনে তিনশ’ ফিট রাস্তায় ‘বিডি সাইক্লিস্ট’ গ্রুপের সদস্যরা উপস্থিত হন। বিজয় দিবসের সকালে তাদের সাইকেল নিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ‘লংগেস্ট সিংগেল লাইন অব বাইসাইকেল মুভিং’ ক্যাটাগরিতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো। এজন্য কমপক্ষে এক হাজার সাইক্লিস্টকে এক লাইনে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ পেরোতে করতে হয়। ৯৮৪ জন নিয়ে আগের রেকর্ডটি ছিল বসনিয়ার। বিডি সাইক্লিস্টস গ্রুপ ১ হাজার ১৮৬ জনকে নিয়ে পারি দেয় প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ। অবশেষে অর্জিত হলো আমাদের সেই কাক্সিক্ষত গিনেজবুক বিশ্বরেকর্ড!!! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিডি সাইক্লিস্ট এর সঙ্গে যুক্ত মিথুন কুমার কোচ তারা অনুভূতি প্রকাশ করেন ঠিক এভাবে- আরও একবার বিশ্বের বুকে, গিনেজবুক রেকর্ডের পাতায় তালিকার শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশের নাম। এ নান্দনিক অর্জন প্রত্যেক দেশপ্রেমী নাগরিককেই ছুঁয়ে যাবে, রোমাঞ্চিত করবে, সন্দেহ নেই। বিডিসাইক্লিস্টের আয়োজনে ১ হাজার ১৮৬ জন সাইক্লিস্টের অংশগ্রহণে হয়ে গেল একক সারিতে দীর্ঘতম সাইকেল চালানোর বিশ্বরেকর্ড, এটি শুধুই একটি রেকর্ড নয়, সাধারণ জ্ঞানের শুধু কোন সাধারণ প্রশ্নোত্তরও নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু, একটি গর্বের উপলক্ষ, একটি অসাধারণ অনুভূতি। এ অনুভূতি কোন অভিব্যক্তিতেই প্রকাশযোগ্য নয়, আর লাভ-লোকসানের স্থূল হিসেবের উর্ধে তো বটেই! বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হবে, আলোচিত হবে যতবার এই রেকর্ডের কথা আলোচনায় আসবে। অনেকে শুধু এই রেকর্ডের কল্যাণেই চিনবে, জানবে আমাদের এই প্রিয় দেশের নাম। তবে শুরুটা কিন্তু সহজ ছিল না মোটেও। অনেক সময়, শ্রম, ঘাম ও তারুণ্যদীপ্ত অনেক স্বেচ্ছাসেবক ও সাইক্লিস্ট ভাইদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে এই অনবদ্য রেকর্ড। সবার মাথায় চিন্তা ছিল একটাই, বাংলাদেশের সম্মান ও গৌরব অর্জন। আমার সর্দিজ্বর ও শারীরিক ক্লান্তির মতো সামান্য সীমাবদ্ধতাও তাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায়। ৯ ও ১৩ ডিসেম্বর ছিল ট্রায়াল রাইড। ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় উঠে ট্রায়াল রাইডে কষ্টকর অংশগ্রহণের পর ১২০০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হই। তারপর অপেক্ষায় থাকি ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে গিনেজবুক বিশ্বরেকর্ড গড়ার সাইকেল রাইড প্রচেষ্টার। অবশেষে এলো সেই বিজয়ের দিন। খুব সকালে প্রস্তুত হয়ে ‘বিজয় সাইকেল শোভাযাত্রায়’ অংশ নিতে পার্থভাই, আকিব ও আমি মানিক মিয়া এভিনিউতে চলে যাই। নারী, শিশু, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল শোভাযাত্রা শেষ হয় সেই নির্ধারিত বসুন্ধরার ৩০০ ফুট রাস্তায়। মনে উত্তেজনা কাজ করছিল, সঙ্গে কিছুটা নার্ভাসও ছিলাম। আমার সামান্য ভুলে এই বড় আয়োজন, এত মানুষের প্রচেষ্টা, পরিশ্রম যদি ব্যর্থ হয় সেই শঙ্কায়। যাই হোক, সব শঙ্কা আর নেতিবাচক চিন্তা জয় করে আমরা সাফল্যের সঙ্গেই রাইড শেষ করলাম, যদিও অনেক কষ্ট হয়েছিল। স্টেপ! কিপ রোলিং! রাইট চেক, লেফট চেক! বলে চেঁচাতে চেঁচাতে, কখনো জোরে, কখনো ধীরে সাইকেল চালাতে গিয়ে, এক সাইকেল থেকে আরেক সাইকেলের দূরত্ব ৫-৬ ফিটের মতো রাখতে গিয়ে অবস্থা ছিল করুণ! দ্বিতীয়বার রাইড করার মতো শক্তি কমে এসেছিল, তাই যখন শুনলাম দ্বিতীয়বার রাইড করতে হবে না, প্রথমটাই যথেষ্ট ভালো হয়েছে তখন এত আনন্দ লাগছিল যে, সবাই উল্লাস প্রকাশ করছিল বিভিন্নভাবে। অতপর, রাইড শেষে আমরা যে যার মতো নিজ বাসস্থানে ফিরে আসলাম আর অপেক্ষায় থাকলাম কখন সেই গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশ্বরেকর্ডের কাক্সিক্ষত ঘোষণাটি আসবে! আর আজকের সন্ধ্যাটাই ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যে ক্ষণ আমাদের উৎকণ্ঠিত অনেক অপেক্ষার মধুর অবসান ঘটিয়েছে, ঠিক যেমনটা আমরা প্রত্যেক সাইক্লিস্ট ও দেশের শুভাকাক্সক্ষী আপামর জনসাধারণ চেয়েছিলাম। জয় হোক বাংলাদেশের, জয় হোক বিডিসাইক্লিস্টের। আর ঐকান্তিক অভিনন্দন গিনেজ বুক বিশ্বরেকর্ডে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সাইক্লিস্টকে।
×