ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চোখের ছানি ও হতাশার সম্পর্ক: ইশারা ছিল কোরআনেই!

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ২৭ মে ২০২৫

চোখের ছানি ও হতাশার সম্পর্ক: ইশারা ছিল কোরআনেই!

চোখের ছানি বা ক্যাটারাক্ট শুধু দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয় এমন নয়, বরং এটি মানসিক স্বাস্থ্যের সাথেও গভীরভাবে যুক্ত—এমন তথ্য আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে উঠে আসছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, বয়স্কদের মধ্যে চোখের ছানি হতাশা বা ডিপ্রেশনের একটি বড় কারণ। কিন্তু অবাক করার মতো সত্য হলো—এই বিষয়টি ১৪০০ বছর আগেই উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআনে।

সূরা ইউসুফে উল্লেখ আছে, নবী ইউসুফ (আ.) হারিয়ে যাওয়ার পর তার পিতা ইয়াকুব (আ.) দুঃখে ভেঙে পড়েন। কোরআনে বলা হয়েছে:

"ওয়াতাওয়াল্লা আ’ন ইউসুফ, ওয়াক্বালা ইয়াসআফা আ’লা ইউসুফ; ওয়াবইয়াদ্ব্বাত আইনাহু মিনাল হুযনি ফা হুয়া কাযিম।"
(সূরা ইউসুফ, আয়াত ৮৪)

অর্থাৎ, তিনি (ইয়াকুব আ.) ইউসুফের কথা মনে করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, “হায়! ইউসুফের জন্য আফসোস!” আর দুঃখে তাঁর চোখ সাদা হয়ে গেল। এটি ছিল এক অসহনীয় মনোবেদনা।

তাফসীর গ্রন্থ অনুযায়ী, ইয়াকুব (আ.) তাঁর ১২ সন্তানের মধ্যে ইউসুফ (আ.)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তাঁর সৌন্দর্য ও চারিত্রিক গুণাবলির কারণে তিনি সবার প্রিয় ছিলেন, যা সৎ ভাইয়েরা সহ্য করতে পারতেন না। একপর্যায়ে তারা চক্রান্ত করে ইউসুফ (আ.)-কে পিতার কাছ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রথমে তারা বাইরে খেলতে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে বাবার অনুমতি নেয়। প্রথমে পিতা রাজি না হলেও বারবার অনুরোধে এবং নিরাপত্তার আশ্বাসে তিনি অনুমতি দেন। কিন্তু বাইরে নিয়ে গিয়ে ভাইয়েরা ইউসুফ (আ.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করলেও, বড় ভাইয়ের পরামর্শে তাকে একটি কূপে ফেলে দেয়। এরপর ছাগলের রক্তমাখা কাপড় এনে বাবাকে দেখিয়ে বলে, ইউসুফ (আ.)-কে বাঘে খেয়ে ফেলেছে।

এই ঘটনার পর পুত্রশোকে কাঁদতে কাঁদতে ইয়াকুব (আ.) অন্ধ হয়ে যান। কোরআনের আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: “শোকে দুঃখে তার দুই চোখ সাদা হয়ে গিয়েছিল।” এটি চোখে ছানির লক্ষণ। আর সেই ছানি পড়ার মূল কারণ ছিল চরম দুঃখ ও মানসিক চাপ। অর্থাৎ, হতাশা ও বেদনা থেকেই ইয়াকুব (আ.)-এর চোখে ছানি পড়ে এবং তিনি ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারান।

আধুনিক বিজ্ঞানও এই কথাই বলছে। ইংরেজিতে চোখের ছানিকে বলা হয় Cataract। উইকিপিডিয়ার ভাষায়, চোখের ভেতরে স্বচ্ছ লেন্স ধীরে ধীরে ঝাপসা বা ঘোলাটে হয়ে যায়, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে। সাধারণত এটি ধীরে ধীরে ঘটে এবং এক চোখে বা দুই চোখেই হতে পারে।

চোখে ছানি পড়লে দেখা দেয়:

  • রঙ ফ্যাকাসে বা ম্লান মনে হওয়া
  • ঝাপসা দেখা বা দ্বৈত দৃশ্য
  • আলোতে সমস্যা বা ব্যথা
  • রাতের বেলায় দৃষ্টিক্লান্তি
  • বই পড়া, মোবাইল দেখা কিংবা গাড়ি চালাতে অসুবিধা
  • পরিচিত মানুষের মুখ চিনতে সমস্যা

আর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো—এই দৃষ্টিসংক্রান্ত অসুবিধার কারণে অনেক সময় মানুষ পড়ে গিয়ে আঘাত পায় এবং মানসিকভাবে হতাশায় ভোগে, যা এক পর্যায়ে অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন—
"The Association Between Cataract Surgery and Mental Health in Older Adults: A Review"—এ বলা হয়, যেসব বয়স্ক ব্যক্তির চোখে ছানি রয়েছে, তাদের মধ্যে হতাশার হার অনেক বেশি।

মায়োক্লিনিকের তথ্য অনুসারে, আমেরিকায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় অর্ধেক মানুষের কোনো না কোনো পর্যায়ে চোখে ছানি পড়ে থাকে।

অর্থাৎ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন নিশ্চিত করছে—চোখের ছানি ও মানসিক হতাশার মধ্যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে। চোখে ছানি পড়লে হতাশা তৈরি হয়, আবার দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ বা হতাশা থেকেও ছানি পড়তে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো—যেখানে এই সম্পর্ক আধুনিক যুগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন, সেখানে ১৪০০ বছর আগে সেই সত্য কীভাবে কোরআনে লেখা ছিল? তখন তো চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো জ্ঞানই ছিল না!

এই বিষয়টি কি প্রমাণ করে না—পবিত্র কোরআন কোনো মানুষের রচিত পুস্তক নয়? বরং এটি এসেছে সরাসরি মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে।

এসএফ

×