
ছবি: ইন্টারনেট
ধন-সম্পদ, প্রভাব, এবং প্রতিপত্তি অর্জন মানুষের জীবনের একটি সাধারণ আকাঙ্ক্ষা। আর্থিক স্বচ্ছলতা জীবনে স্বস্তি ও শান্তি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সম্পদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি এবং এর পেছনে অযথা সময় ব্যয় অনেক ক্ষেত্রে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। আজকের যুগে মানুষ ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য এতটাই ব্যস্ত যে, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বা আত্মিক শান্তির জন্যও সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইসলামে সম্পদ উপার্জনকে নিন্দনীয় মনে করা হয়নি, বরং জীবনযাপনের জন্য হালাল পথে সম্পদ অর্জনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং হিসাব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা হাদিস ও কোরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সম্পদ, যদি তা সঠিকভাবে ব্যয় না হয়, তাহলে পরকালে কঠিন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। এ কারণেই ইসলামে পরিমিত সম্পদ অর্জন এবং সঠিক উপায়ে তার ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে সম্পদের অতিরিক্ত বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যের অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, একসময় মানুষের মধ্যে এত ধন-সম্পদ থাকবে যে, ফকির-মিসকীন খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি সদকা ও জাকাত দেওয়ার মতো গ্রহণকারীও পাওয়া যাবে না।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন,
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضَ حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُ صَدَقَتَهُ وَحَتَّى يَعْرِضَهُ فَيَقُولَ الَّذِي يَعْرِضُهُ عَلَيْهِ لَا أَرَبَ لِي
“কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মানুষের মধ্যে এত সম্পদ বৃদ্ধি পাবে যে তা উপচে পড়বে। সম্পদের মালিক তখন চিন্তায় পড়বে—কে তার সদকা গ্রহণ করবে? লোকদের কাছে সদকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা বলবে, ‘আমার কোনো প্রয়োজন নেই।’” (মুসলিম, হাদিস: ১৫৭; বুখারি, হাদিস: ১৪১১)
এই আলামত বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে এ দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান বর্ণনা করেন যে, সে সময় লোকেরা প্রচুর সম্পদ নিয়ে এসে বলতো, ‘যেখানে প্রয়োজন মনে কর, সেখানে এই সম্পদ বিতরণ করো।’ কিন্তু কোনো গ্রহণকারী না পাওয়ায় সেই সম্পদ ফেরত দিতে হতো। তাঁর শাসনামলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, জাকাত গ্রহণ করার মতো কোনো মানুষ ছিল না।
বিশেষজ্ঞ আলেমরা মনে করেন, এই আলামত পুনরায় ইমাম মাহদির শাসনামলে প্রকাশ পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,
“শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অচিরেই তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আ.) ন্যায়বিচারকারী হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙে দেবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিজিয়া রহিত করবেন এবং ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে কেউ তা গ্রহণ করবে না।” (বুখারি, হাদিস: ২২২২)
এ থেকে বোঝা যায়, কিয়ামতের সময় সম্পদের এই প্রাচুর্য একাধিক সময়ে প্রকাশ পাবে।
নাহিদা