
ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুর-২ আসন (মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ) বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। স্বাধীনতার পর থেকে যে দল সরকার গঠন করেছে, সাধারণত সেই দলই এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল একবার—স্বাধীনতার পর প্রয়াত নূরুল হুদা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে এমপি ও মন্ত্রী হন প্রয়াত (অব.) মেজর শামসুল হক, বিএনপির আমলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হুদা এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের হয়ে এমপি ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম রফিকুল ইসলাম ও নূরুল আমিন রুহুল। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হন শামসুল আলম মোহন।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান নূরুল আমিন রুহুল। এরপরই এলাকায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হয়ে ওঠে। মায়া চৌধুরীর সময় সুবিধাবঞ্চিতরা রুহুলের পক্ষে একজোট হলেও শুরু হয় দলে দলে বিভক্তি, ব্যক্তিগত ক্ষোভ, এবং দণ্ড-দাম্ভিকতা। একপর্যায়ে দলে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জবরদখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিএনপি তখন ছিল তুলনামূলক নিস্ক্রিয়।
তবে চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগের পতনের ধারায় বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিভক্তির কারণে সেই স্বস্তি এখন আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মতলবে বিএনপির অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়েছে একাধিক গ্রুপ। যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন একাধিক, মূলত দুটি গ্রুপ এখন সক্রিয় ও প্রভাবশালী।
একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত নূরুল হুদার পুত্র, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হুদা। অপরটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল উদ্দিন। এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব এখন মতলবের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী, কেউ হারিয়েছেন অঙ্গ, কেউবা হয়েছেন মামলার আসামি।
তানভীর হুদার পক্ষের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ড. জালাল উদ্দিনের অনুসারীরা পদ-পদবি ব্যবহার করে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকি তারা আওয়ামী লীগের সাবেক অনুসারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন, এবং মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত। এতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।
অন্যদিকে, ড. জালাল উদ্দিনের সমর্থকেরা বলেন, তানভীর হুদার অনুসারীরা দখলবাজি ও অপকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন, যা দলের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে দলের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হবে এবং আগামী নির্বাচনে অন্য দল এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। তাই দলীয় কোন্দল ভুলে একতাবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
রিফাত