ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে ॥ ফখরুল

১১ ফেব্রুয়ারি সব ইউনিয়নে পদযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

১১ ফেব্রুয়ারি সব ইউনিয়নে পদযাত্রা

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব সাংগঠনিক বিভাগে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমাবেশ করেছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি ও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে শনিবার পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগপৎ আন্দোলনের ষষ্ঠ কর্মসূচি ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের সব ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। এর আগে তিনি বলেন, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা বর্তমান সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। হামলা মামলা করে আমাদের আন্দোলন দমাতে পারবে না সরকার। 
পূর্ব ঘোষণা অনুসারে বেলা দুটায় সমাবেশ শুরু হলেও তার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তাদের মধ্যে অনেকে একই রঙের টিশার্ট ও ক্যাপ পরে বাদ্যের তালে তালে মিছিল নিয়ে আসেন। এ সময় নেতাকর্মীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তবে সমাবেশ কেন্দ্র করে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে। 
নয়াপল্টন ভিআইপি সড়ক দখল করে বিএনপি সমাবেশ মিছিল করায় দুপুর ১২টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এর ফলে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 
গতবছর ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণা অনুসারে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হয় দুই দফায়। প্রথম দফায় ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়া সকল মহানগর ও জেলা সদরে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।

ওইদিন রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় পালন করা হয় গণমিছিল কর্মসূচি। আর ওই কর্মসূচি পালন শেষে ঘোষণা করা হয় যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণঅবস্থান। ওই ঘোষণা অনুসারে ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশের সকল বিভাগে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো। ১৬ জানুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় কর্মসূচি সারাদেশের সকল মহানগর ও উপজেলায় সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

১৬ জানুয়ারি সমাবেশ মিছিল কর্মসূচি শেষে ঘোষণা করা হয় চতুর্থ কর্মসূচি- সকল বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ। ২৫ জানুয়ারি ওই কর্মসূচি পালন শেষে ঘোষণা করা হয় যুগপৎ আন্দোলনের ৫ম কর্মসূচি সকল সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ। শনিবার এ সমাবেশ কর্মসূচি পালন শেষে ঘোষণা করা হয় যুগপৎ আন্দোলনের ৬ষ্ঠ কর্মসূচি ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে পদযাত্রা। 
নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এবার কর্মসূচি শুরু করব ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। এরপর উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে এই কর্মসূচি পালিত হবে। এরপর আমরা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে জনগণের সরকার গঠন করব। তিনি বলেন, ঢাকায় যে কয়টি পদযাত্রার কর্মসূচি পালিত হয়েছে তাতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এজন্য এবার এ কর্মসূচি তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা মহানগরেও এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। তারপর চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দলীয় নেতাকর্মীসহ সবাইকে এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকারের লোকজন টাকা পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে। এ সরকার পাতাল রেলের প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে, অপরদিকে গরিব মানুষের ভাতার টাকা লুট করছে সরকারের লোকেরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ৬ আসনের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন হিরো আলমের কাছেও অসহায়। সেজন্য উপনির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে।
আজ বাংলাদেশ লুটেরা দেশে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের কারণে দেশের এ অবস্থা হয়েছে। তাই আজকের সমাবেশে মাধ্যমে জনগণ আবারও প্রমাণ করেছে তারা এখন একটি দাবিতে আন্দোলন করছে, আর সেটা হলো এই সরকারের পদত্যাগ। দেশের মানুষ আশা করে এ সরকার দ্রুত পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আর সে নির্বাচনের পর আমরা দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। 
বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, হিরো আলম প্রমাণ করেছেন আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু চাপার জোরে টিকে আছে। বারবার মিথ্যা কথা বলে তারা মানুষকে প্রতারিত করতে চায়। বিএনপির আন্দোলন জাতির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন দাবি করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে, সেটি হচ্ছে গণতন্ত্র এবং গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। সরকার চাল, ডাল, গ্যাসের দামসহ সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। গরিব মানুষের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। এই সরকার গরিব ও সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। দেশের মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাই তারা এই মুহূর্তেই বর্তমান সরকারের পতন দেখতে চায়। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক ঋণ লাগে ঠিক আছে। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করছে, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করছে।
১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে পদযাত্রা ও গণসংযোগ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ ॥ সরকারবিরোধী যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে পদযাত্রা ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। শনিবার দুপুরে জাতীয়  প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওইদিন মিরপুর ১২ নম্বরে গণতন্ত্র মঞ্চ গণসংযোগ কার্যক্রম শেষ করে একই দিন ফার্মগেট থেকে শাহবাগ ও পল্টন হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বলে তিনি জানান। 
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ৬টি আসনের উপ-নির্বাচনও ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য করতে পারেনি। বগুড়ায় হিরো আলম ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। মানুষ আগ্রহী হয়ে ভোট দিয়েছিল। তাকে স্যার বলতে হবে, এটা প্রশাসনের লোকেরা মানতে পারল না। তাই হিরো আলমকে জিততে দেওয়া হয়নি।
১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ॥ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ  থেকে সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ১১ দলীয় এই জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি  চেয়াররম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। এ সময় তিনি বলেন, মানুষ আজ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে রয়েছে। তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ  নেই। সরকার ব্যস্ত দুর্নীতি ও লুটপাটে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। তাই যতদিন বর্তমান সরকার বিদায় না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে। 
১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল ইউনিয়নে ১২ দলীয় জোটের পদযাত্রা ॥ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে ১২ দলীয় জোট। শনিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক সংলগ্ন রাস্তায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে জোটের সম্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান  মোস্তফা জামাল হায়দার সভাপতির বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 
দাবি একটাই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ- রেদোয়ান ॥ বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া দেশে কখনই শান্তি আসবে না বলে মন্তব্য করে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, আমাদের দাবি একটাই এই সরকারের পদত্যাগ। শনিবার বিকেলে ১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর এফডিসি সংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 
রেদোয়ান আহমেদ বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন  লেগেছে। সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকারি দলের লোকেরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষকে শাস্তি দেয়ার কোনো অধিকার এ সরকারের নেই। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে কোনো সুষ্ঠু ভোট হয়নি। সরকারি দলের কর্মীদের চাপে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না নির্বাচন কর্মকর্তারা।
সাভারে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আটক ৩০ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাভারের আমিনবাজারে রাজধানীর প্রবেশমুখে শনিবার পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশ জানায়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে করে নয়, বরং যাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়েছে এবং যারা জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর দিতে পারেনি, তাদেরই আটক রাখা হয়েছে, এবং তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। 
ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ১০ দফা দাবি আদায়ে বিএনপি সমাবেশ করেছে ময়মনসিংহে। নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাস মাঠে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শনিবার বিকেলে সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে সকাল থেকেই দলে দলে মিছিলসহ বিএনপির সাতটি ইউনিটের নেতা কর্মীরা সমাবেশস্থলে যোগ দেয়।

এই বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদিকে দেশজুড়ে বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদ শান্তি সমাবেশ হয়েছে ময়মনসিংহে। শনিবার দুপুরে নগরীর সার্কিট হাউস সংলগ্ন জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এই সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর শাখা।

চট্টগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস জানায়, সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে নিজেরাই মারামারি করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলে কার আগে কে গিয়ে সামনের সারিতে দাঁড়াবে এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল হয়। শনিবার নগরীর কাজির দেউড়ি নূর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় পরিস্থিতি। সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ক্ষমতায় বসতে ভোট চুরির পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ। লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তারা। 
শনিবার নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের সামনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে লরির ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চে দুপুরেই শুরু হয় চট্টগ্রামের বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে সারাদেশে সমাবেশ করে বিএনপি।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। বর্তমানে গণতন্ত্র নেই। আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন করছি। 
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি বলেন, লুটপাট করে আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আমরা সেসব টাকা দেশে ফেরত আনব। এই সরকার লুটপাটের সরকার, এটি জনগণের সরকার নয়। 
খুলনা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস জানায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এই সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা-হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি শনিবার বিকেলে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের কেসিসি মার্কেটের সামনে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকার পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের সরকারের সকল অপকর্মকেও হার মানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চুরি, দুর্নীতি, খুন, গুম এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এই সরকার করছে না। তাদের সকল আত্মীয়-স্বজনের কাছে এই চুরির টাকা রয়েছে। শোনা যায়, এই টাকা ১০ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকার ১৪ বছর একটানা ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার প্রতি লোভের জন্ম দিয়েছে। তাই আর ক্ষমতা ছাড়তে চাইছে না। কিন্তু এই সরকারের পতন ঘটাতেই হবে। সেজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজপথ দখলে রাখতে হবে। হামলা-মামলা দিয়ে সেই আন্দোলন রোধ করা যাবে না। প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন বক্তারা। আরও বলেন, দাবি আদায়ে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
বরিশাল ॥ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতার মোহে অন্ধ নয়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। তিনি আরও বলেন, এ সরকার যদি দেশকে ভালোবাসে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষকে ভালোবাসে, তাহলে এ জুলুম-অত্যাচারের পথ পরিহার করে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়াক। আমরাতো জনগণের কাতারে আছি। তারপর দেশের ভোটাররা যাকে ভোট দিয়ে বানাবে সে দেশ পরিচালনা করবে। এতে আওয়ামী লীগের ভয় কীসের।
শনিবার বিকেলে বরিশাল জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে ১০ দফা দাবিতে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈন খান আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্র চাই। আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা কোনোদিন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হতে পারে না। আজ আওয়ামী লীগকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন তারা সংসদে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল, কেন তারা বাকশাল ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছিল, কেন দিনের ভোট রাতে হয়। 
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, স্যাংশন তো মাত্র ১০/১২ জনের। স্যাংশনের দেখছে কী? ওরা পালানোর জায়গাও পাবে না। তিনি আরও বলেন, কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য আহাম্মক বানানো যায়, সব সময়ের জন্য সবাইকে আহাম্মক বানানো যায় না। বিএনপি আওয়ামী লীগের শত্রু না, আমরা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগ।
সিলেট ॥ শনিবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, দেশ এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি, ভোটকেন্দ্রে কুকুর শুয়ে ছিল। তাই এই নির্বাচনকে মানুষ কুত্তা মার্কা নির্বাচন বলে। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতেই শেষ হয়ে যায়। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। 
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকির সভাপতিত্বে, সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
রাজশাহী ॥ ভোটের রাজনীতি আর নেই। ১৫ বছর আগে যারা ভোটার হয়েছেন তারা আজো একটি ভোট দিতে পারেননি। আমিও ভোট দেওয়া ভুলে গেছি মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার বাংলাদেশকে লুটের আখড়া বানিয়েছে। টাকা কামানোর মেশিন বানিয়েছে বাংলাদেশকে। আর আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। এ সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। শনিবার বিকেলে রাজশাহীর সোনাদীঘির মোড়ে বিএনপির এ বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিটা আওয়ামী-জামায়াতের উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী-জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে বারবার বলেছিলেন ‘এ মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার।’ আজকের প্রধানমন্ত্রী সে সময় পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন, চিরদিনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে হবে। আজ ক্ষমতায় এসেই এ আওয়ামী লীগ সরকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠিয়ে দিলেন। আদালতের রায়ে বাংলাদেশের জনগণ সব সময় চলে না। আদালতের রায়ে রাজনীতি নির্ধারণ হয় না। রাজনীতি রাজনীতির মতোই চলবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংসদ থেকে পাস করে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে সংবিধানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।  
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের দাবিতে। আজকে গরিবের পেটে খাওয়া নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কথায় কথায় তেলের দাম বাড়িয়ে দেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেন। কারণ আপনাদের তো ভোটের দরকার নেই। যদি ভোটের দরকার থাকত তবে জনগণের চাওয়া কী তা তাকিয়ে দেখতেন। জনগণ কী ভাবছে তা আপনারা ভাবতেন। এমন কিছুই ভাবছেন না আপনারা। কারণ আপনারা জানেন বিকল্প পন্থায় ক্ষমতায় চলে আসবেন।
কুমিল্লা ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা কখনো জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে  দেবে না, আদায় করে নিতে হবে। এ সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দেশের মানুষ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে আর চায় না, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার চায়। তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। 
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি ও ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার  বিকেলে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।

×