ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতা, নৈরাজ্যের আশঙ্কা

১০ ডিসেম্বর ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

শংকর কুমার দে

প্রকাশিত: ০০:৩২, ২ ডিসেম্বর ২০২২

১০ ডিসেম্বর ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

১০ ডিসেম্বর ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রক্তাক্ত সহিংসতা, নাশকতা, নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ংকর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সমাবেশ সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপির মহাসমাবেশের জন্য ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

অপরদিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও দলের মহাসমাবেশে উপস্থিত হবেন কি? এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে গোয়েন্দা মহলে। ১০ ডিসেম্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ংকর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভাগীয় সমাবেশ শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দও।  মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে দুই দলের নেতৃবৃন্দের বাকযুদ্ধে ইতোমধ্যেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

মহাসমাবেশ ঘিরে গোটা রাজধানীর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে জানমাল রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি যেন সমাবেশ করার জন্য যথেষ্ট সময় পায় বা প্রস্তুতি নিতে পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন দুদিন এগিয়ে ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে।

কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে রাজি নয় বিএনপি। বরং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করতে অনড় অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। ফলে সঙ্গত কারণেই বিএনপির এমন অনড় অবস্থানের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে তৃতীয়পক্ষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ভয়ংকর পরিকল্পনা নিতে পারে। তৎপর হয়ে উঠতে পারে অশুভ শক্তি। মুখে ভিন্ন কথা বললেও জামায়াত-শিবির মহাসমাবেশে অংশ নিবে এমনটাই ধরে নিতে হবে। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠীও।
নয়াপল্টন এলাকা বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এবং প্রতিটি অলি-গলিতে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার রয়েছে যারা অতিতে নাশকতা, নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে বলে জানা গেছে। ১০ ডিসেম্বর সারাদেশ থেকে লোক এনে নয়াপল্টনের আশপাশে যেমন মিন্টো রোড, মৎস্যভবন মোড়, কাকরাইল, পল্টন মোড় এবং মতিঝিল পর্যন্ত পুরো এলাকা দখল করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এবং হেফাজতের মতো ১০ ডিসেম্বর বিএনপির একটি রক্তাক্ত সহিংসতার ঘটাতে চায় বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, শুধু তাই নয় ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে পুরো রাজধানীকে সেদিন অচল করে দেয়ার একটা পরিকল্পনা থাকাটাই স্বাভাবিক। লক্ষাধিক মানুষের পদভারে ঢাকার রাজপথ যানজটের কবলে পড়ে অচল হয়ে যাবে এমন পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, ১০ ডিসেম্বর কোনো কিছুই হবে না।

তারা কোনো সহিংস কার্যক্রম করবে না। তারা স্রেফ একটি সমাবেশ করবে মাত্র। কিন্তু ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত কর্মিসভাগুলোতে সুস্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে, ১০ ডিসেম্বর নেতাদের নির্দেশ ছাড়া কোনো কর্মী যেন সেদিন সমাবেশস্থল ত্যাগ না করে। আর কর্মীদের যেখানে বাধা দেয়া হবে সেখানে যেন তারা প্রতিবাদ করে।

এ সমস্ত ঘটনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি পুরো ঢাকা শহরকে অবরুদ্ধ করে একটি সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করার ছক কষা হয়েছে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে একটি ভয়ংকর পরিকল্পনায় সামনে এগুচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর যদি খালেদা জিয়া সমাবেশে যোগ দেয় তাহলে আদালত ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে চাহিদা অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যদি উদ্যান ছেড়ে পল্টনে সমাবেশ করে তাহলে তারা ভুল করবে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জামিনে মুক্ত জীবনযাপন করছেন তিনি। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কি ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশে যোগ দিবেন? যদি তিনি যোগ দেন তাহলে কি হতে পারে? ইতোপূর্বে বিএনপির নেতা আমানুল্লাহ মহাসমাবেশে বেগম জিয়ার যোগদান ও দেশ তার নির্দেশে চলবে এবং সাজাপ্রাপ্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ফিরে আসবেন।

এসব প্রসঙ্গ আগামী ১০ ডিসেম্বর ঘিরে আবারও সামনে আসার প্রধান কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দের বক্তব্যেও।

×