
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের এটি প্রথম বাজেট, যা দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১২ দশমিক ৭ শতাংশের সমতুল্য। এটি দেশ স্বাধীনের পর ৫৪তম বাজেট। মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালন ব্যয় ও অন্যান্য খাতে ৫,৬০,০০০ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ২,৩০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের যাঁতাকলে লোকদেখানো, মন ভোলানো উচ্চাভিলাষী ১৫টি বাজেট তারা দিয়েছিল। সেগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজেটগুলো ছিল দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা বিবর্জিত। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষে পূর্ণ। ফলে, ফ্যাসিবাদী আমলের বাজেট ধনীকে করেছে লুটেরা এবং গরিবকে করেছে নিঃস্ব থেকে আরও প্রান্তিক। এমন এক কঠিন বাস্তবতায় বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে সাহসী বাজেট পেশ করেছে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। যে সব ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান হয়েছে। গেজেটভুক্ত সে সব যোদ্ধার জন্য ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক উদ্যোগ। গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসাসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে দ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
সাধারণ করদাতাদের আগের মতোই বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে একটি কর স্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা হবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে পরের এক অর্থবছর পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
চলতি বাজেটে মুঠোফোন, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকারের দাম বাড়তে পারে। প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, থালাবাসনসহ প্লাস্টিকের গৃহস্থালি সামগ্রী ও সমজাতীয় পণ্যে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এমনিতেই জনবহুল বাংলাদেশে পরিবেশের অবস্থা খুবই নাজুক। পরিবেশবান্ধব পণ্যে ছাড় দেওয়ায় পরিবেশের ওপর কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যে দাম কমবে বলে আশা করা যায়। স্যানিটারি ন্যাপকিন, তরল দুধ, প্যাকেটজাত তরল দুধ, বলপয়েন্ট পেন বা কলম, স্যামন, টুনা ইত্যাদি বিদেশি মাছ, পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক ৫০০ টাকা কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চিনি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, এমনকি এটি শিশু খাদ্য হিসেবেও গণ্য। চিনির দাম কমলে পরিবারের ব্যয়ের ওপর চাপ কমবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এবারের বাজেট সম্পদের সুষম বণ্টন, বৈষম্য নিরসন ও জনকল্যাণে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
প্যানেল