ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রতারণা করার জন্য বাংলাদেশি আইনে শাস্তি কী? ইসলাম ধর্মে শাস্তি কী? জানুন আইন এবং ইসলাম ধর্ম কী বলছে!

মোঃ হুমায়ুন ফরিদ,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,পাবনা 

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:১৫, ১ জুন ২০২৫

প্রতারণা করার জন্য বাংলাদেশি আইনে শাস্তি কী? ইসলাম ধর্মে শাস্তি কী? জানুন আইন এবং ইসলাম ধর্ম কী বলছে!

বাংলাদেশে প্রতারণা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রতিদিনই নানা রকম প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে—কখনো চাকরির প্রলোভন, কখনো ভুয়া ব্যবসায়িক চুক্তি, আবার কখনো অনলাইনে পণ্য বিক্রির নামে মানুষকে ঠকানো।

আইনে প্রতারণার সংজ্ঞা:দণ্ডবিধি ১৮৬০ সালের ৪১৫ ধারা অনুযায়ী, প্রতারণা হলো  কারও ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা বিশ্বাসভঙ্গ করে তাকে আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা।

প্রতারণার শাস্তি কী?
দণ্ডবিধি ৪১৭ ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণ প্রতারণার শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড।তবে যদি প্রতারণা জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়, বা বিশেষভাবে পরিকল্পিত হয়, তাহলে দণ্ডবিধি ৪২০ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

চলমান পরিস্থিতি:দেশজুড়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিজিটাল প্রতারণা বা ‘সাইবার ফ্রড’ নিয়ে এখন আরও বেশি সতর্ক প্রশাসন। অনলাইন লেনদেনে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইনজীবীর মতামত:অ্যাডভোকেট সানজিদা রহমান বলেন, “প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে এবং প্রয়োজনে ৪২০ ধারায় মামলা করতে হবে।”

ইসলামে প্রতারণার শাস্তি

কুরআনের আলোকে:সুরা আল-মুতাফ্ফিফিন (৮৩:১-৩)

"ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষ থেকে মেপে নেয়, তখন পুরোটা নেয়, আর যখন অন্যকে দেয়, তখন কম দিয়ে দেয়।"
এই আয়াতে ব্যবসায়িক প্রতারণা বা কম মাপে দেওয়ার কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ এই ধরনের প্রতারকদের জন্য “ওয়াইল” শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ হলো ধ্বংস বা জাহান্নামের ভয়ংকর স্থান।

সুরা আন-নিসা (৪:২৯)

“তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না এবং নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।”
এখানে অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ গ্রহণ করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, যা প্রতারণার মধ্যেই পড়ে আছে।

হাদীসের আলোকে

নবী (সা.) বলেছেন,“যে প্রতারণা করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”(সহীহ মুসলিম)
এই হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রতারক ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটা প্রতারণাকে ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা ঘৃণিত তা বোঝায়।

আরেক হাদীসে বলেন,“ক্রেতা ও বিক্রেতা যদি সত্যবাদী ও স্বচ্ছ হন, তবে তাদের লেনদেনে বরকত হয়। আর যদি তারা মিথ্যা বলে ও গোপন করে, তবে সে লেনদেন থেকে বরকত উঠে যায়।”(সহীহ বুখারী)

শাস্তির রূপ:ইসলামী আইন বা শরিয়াহ অনুযায়ী প্রতারণা যদি বড় আকারে হয়, যেমন:অন্যের সম্পদ জালিয়াতি করে আত্মসাৎ করা,মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতি করা,বিশ্বাসভঙ্গ করা,তাহলে তাদের বিচারকের (ইসলামী আদালত) মাধ্যমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শাস্তি হতে পারে-

সম্পদ ফেরত দেওয়া,শাস্তিমূলক অর্থদণ্ড,সমাজে অপমানজনক অবস্থান,কখনো কখনো শরিয়াহ মোতাবেক দণ্ড (যদি ক্ষতির পরিমাণ ও প্রমাণ শক্তিশালী হয়)


ইসলামে প্রতারণা শুধু আইনত অপরাধ নয়, বরং এটা এমন এক পাপ যা মানুষের ঈমানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনো প্রতারণা করতে পারে না। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত সত্যবাদী, স্বচ্ছ এবং বিশ্বস্ত হওয়া।

আফরোজা

×