ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলুটিলা গুহা: প্রাকৃতিক রহস্যে ঘেরা পাহাড়ি এক অ্যাডভেঞ্চারের নাম

হাবিবুর রহমান সুজন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২ জুন ২০২৫

আলুটিলা গুহা: প্রাকৃতিক রহস্যে ঘেরা পাহাড়ি এক অ্যাডভেঞ্চারের নাম

ছবি: জনকণ্ঠ

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ‘আলুটিলা গুহা’। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ‘মাতাই হাকর’ বা ‘দেবতার গুহা’ নামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রহস্যময় পরিবেশের জন্য এটি এখন অনেক ভ্রমণপিপাসুর কাছে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন—একটি ভয়ংকর অন্ধকার গুহার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন আপনি। আপনার হাতের ছোট্ট একটি বাঁশের মশালটাই আলোর একমাত্র উৎস। পায়ের নিচে এবড়ো-থেবড়ো পাথর আর হিমশীতল পাহাড়ি ঝরনার জলধারা বয়ে চলছে। গুহার ভেতর দিয়ে এগোতে গিয়ে একসময় আপনাকে হামাগুড়িও দিতে হয়। গুহার দেয়ালও ধীরে ধীরে চেপে আসছে। একসময় দেখা মেলে এক চিলতে আলো—সবুজ গাছপালায় ঘেরা পৃথিবীতে ফিরে আসার অনুভূতি।
না, এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। এমন অভিজ্ঞতা আপনিও নিতে পারেন, আর তার জন্য খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। বাংলাদেশেই আছে এমন অসাধারণ গুহা—আলুটিলা।

গুহার অবস্থান
আলুটিলা গুহা অবস্থিত খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার আরবারী পাহাড়ে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,০০০ ফুট উচ্চতায়। জেলা শহর খাগড়াছড়ি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার।

গুহার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। ভেতরে রয়েছে ঘন অন্ধকার, পিচ্ছিল মাটি, শীতল পরিবেশ ও একটি ছোট ঝর্ণা। এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হতে হয়। পুরো গুহা পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। অনেক জায়গায় গুহার উচ্চতা এতই কম যে মাথা নিচু করে হাঁটতে হয় বা কখনো হামাগুড়িও দিতে হয়। অন্ধকারপ্রিয় ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এটি হতে পারে জীবনের স্মরণীয় এক ভ্রমণ।

কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে:
সায়েদাবাদ থেকে শান্তি, হানিফ, এস আলম, শ্যামলী, ইকোনো বা ঈগল পরিবহনের বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ি যেতে পারেন।

চট্টগ্রাম থেকে:
অক্সিজেন মোড় থেকে বিআরটিসি ও শান্তি পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন।

খাগড়াছড়ি থেকে আলুটিলা:
সিএনজি, মোটরবাইক অথবা জনপ্রিয় ‘চান্দের গাড়ি’ ভাড়া করে সহজেই পৌঁছানো যায় গুহায়।

খাবার ও থাকার ব্যবস্থা
খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। সেখানে খেতে পারেন পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী খাবার, কফি ও হাসের কালাভূনা। আবাসনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল।

ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস:
১। গুহায় নামার সময় সিঁড়িতে সাবধানে চলুন, তাড়াহুড়া নয়
২। ভেতরে অন্ধকার, সঙ্গে আলো রাখুন ও কাউকে সঙ্গে নিন
৩। পিচ্ছিল মাটির কারণে গ্রিপ ভালো জুতা পড়ুন
৪। গুহার ভেতরে উচ্চস্বরে কথা বা চিৎকার এড়িয়ে চলুন
৫। ব্যবহৃত মশাল নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন
৬। প্রয়োজনীয় পানি ও জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করুন

মুমু

×