
বর্তমান যুগ প্রযুক্তির, নতুন সম্ভাবনার আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সূচনা। বিশ্বের এই প্রযুক্তি নির্ভরতা একদিনে আসেনি। এসেছে কালের পরিক্রমার বহু প্রয়োজনে, মূলত সবকিছুকে আরও সহজ করার উদ্দেশ্যে। দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়ানো প্রযুক্তির ভিড়ে যে প্রয়োগটি আমাদের সবার দিনের অধিকাংশ সময় জুড়ে থাকে সেই প্রযুক্তিটি হলো স্মার্টফোন। স্মার্টফোন নির্ভরতা এখন শুধু আধুনিক কিংবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পূর্বের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মও স্মার্টফোনের মুখাপেক্ষি হচ্ছে। এই মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা যখন আসক্তিতে পরিণত হয় তখন ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক প্রভাবটাই যেন শুধু দৃশ্যমান থাকে। সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি যেমন- লেটেস্ট স্মার্টফোন, কম্পিউটার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশ আজকের তরুণরা যার অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তাই ক্ষতিকারক দিকগুলোর প্রভাব প্রতিনিয়ত বর্তমান প্রজন্মের জীবনে দৃশ্যমান। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে আসক্তির অভ্যাস দীর্ঘসময় পর্যন্ত তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে মনোনিবেশ না করতে পারা, সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করাসহ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তীব্র প্রভাব ফেলছে। এখানেই এক বিরাট শঙ্কা জাগতে পারে যে অনলাইন কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তি কেবল শিক্ষাজীবনে প্রতিকূলতা তৈরি করছে কিনা। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক স্মার্টফোন ও নব্য সম্ভাবনাময় আবিষ্কারগুলোর বেশির ভাগই হচ্ছে শিক্ষার্থীবান্ধব যা লেখাপড়াকে অবাধ করে তোলার উদ্দেশ্যেই মূলত তৈরি। প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলো বহু শিক্ষার্থীর সাফল্যের অগ্রপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। তাদের শিক্ষাজীবনে অগ্রগামী করে তোলার পিছনে স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তির ভূমিকা যে কোনো পথপ্রদর্শকের এর থেকে কোনো অংশে কম নয়। নির্জন প্রান্তরগুলোয় যেখানে শিক্ষার মান নেই বললেই সেসকল জায়গায় মানসম্মত পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট। নানা সামাজিক মাধ্যমগুলোয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এখন ঘরে বসেই বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দিচ্ছে যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর সুবিধা বঞ্চিত ছেলে মেয়েদের জন্য স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তি আশীর্বাদ। আধুনিক শিক্ষার সুব্যবস্থা অনেকটাই শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় গ্রামের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইন্টারনেট এক নতুন সম্ভাবনার নাম। এই সম্ভাবনা যেভাবে গ্রামে গঞ্জে নিরক্ষরতার হার কমিয়ে আনতে পারবে সেভাবে দারিদ্র্য বিমোচনেও রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবে। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা ও প্রযুক্তির পর্যাপ্ত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যেন দেশের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই নতুন সম্ভাবনাময়ী বিশ্বে পিছিয়ে না পড়ে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইন কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ আধুনিকায়ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে করে সকল ছাত্রছাত্রী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকেই অগ্রাধিকার দিতে পারে। সর্বোপরি সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের উচিত আধুনিক এ প্রযুক্তিগুলোর সর্বাধিক সুবিধাগুলো বেছে নেওয়া। কেননা ব্যস্ত নগরীর যানজট ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে এই ব্যয়বহুল ও সময়ক্ষেপণ শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বল্পমূল্যে, সময়সাশ্রয়ী ও সহজ করে তোলার জন্য স্মার্টফোনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ অনলাইন কেন্দ্রিক করতে দেশীয় অনলাইন শিক্ষাঙ্গনগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন।
তবে হাতে হাতে প্রযুক্তি তুলে দেয়ার পূর্বে এর সঠিক ব্যবহার ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে শেখানো সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাবা মা, শিক্ষকের মতো অভিভাবকদের ভূমিকা মুখ্য হলেও যে কোনো অগ্রজেরই এখানে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে যাতে প্রযুক্তির অসংখ্য ইতিবাচক দিকগুলো গুটিকয়েক নেতিবাচক দিকের নিচে ধামাচাপা না পড়ে যায়। আবার অভিভাবকের স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি ও খামখেয়ালি মনোভাবও সন্তানের মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতার অন্যতম এক কারণ। নতুন সম্ভাবনার এ বিশ্বে স্মার্টফোনের মতো আধুবিক প্রযুক্তিগুলো এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। তবে এর ক্ষতিকারক দিকগুলোকে যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। সকল প্রযুক্তির সঠিক ও পরিমিত ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলাই আসক্তিমূলক আচরণ পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হতে পারে।
সামিহা তাসনিম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল