
.
সাতচল্লিশে দেশ ভাগের পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত, যা আজও চলছে, হয়তো ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে। পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের দ্ব›দ্ব-সংঘাতের রেশ থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। জন্মলগ্ন থেকেই এ অঞ্চলের মানুষ উপমহাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ দেখে আসছে। ভারত সম্প্রতি পাকিস্তানের কাছে পরাজয় বরণ করলেও সীমান্ত অত্যাচার চালিয়ে এ দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। দেশের স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। যা হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের চরম সাম্প্রদায়িক চরিত্র। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ভারতকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার ঋণ ভারত কোনো দিন পরিশোধ করতে পারবে না। এমন কথা স্বয়ং পতিত শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন। তবু কী ভারতের কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ রয়েছে?
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে ভারতের বৈরিমূলক আচরণ আমরা বরাবরই দেখতে পাচ্ছি, যা ক‚টনৈতিক কিংবা বাণিজ্যিক ক‚টনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতা ও মর্যাদা চাই। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে সম্প্রীতি চাই। ভারত স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার মধ্যে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ কয়েক ধরনের পণ্য রয়েছে।
ভারতের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রবাহে বিঘœ ঘটানোর পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানিতে জটিলতা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী মহল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য হয়। এগুলোর মধ্যে অসমে তিনটি, মেঘালয়ে দুটি ও ত্রিপুরায় ছয়টি বন্দর রয়েছে। অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনো ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ বা ‘ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট’ দিয়ে এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে নি¤েœাক্ত পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না।
ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস; বেকারি, চিপস, ¯ø্যাকস এবং কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার; তুলা ও সুতার ঝুট; পিভিসিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য এবং কাঠের তৈরি আসবাবপত্রও রয়েছে বিধিনিষেধের আওতায়।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি অব্যাহত রাখছে ভারত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এখন থেকে কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে। এ ছাড়া ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল কিংবা ভুটানে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিও অব্যাহত থাকবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর যে চড়া শুল্কারোপ করেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত তার চেয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। আগস্ট-উত্তর বাংলাদেশ-ভারত ক‚টনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা উভয় দেশকেই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা চাইব, আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই একটি সম্মানজনক অবস্থানে উভয় দেশ পৌঁছবে।