
দুর্বল ও বিধ্বস্তপ্রায় শেয়ারবাজারে গতি এবং গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থ উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো এক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন যমুনায়। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এবং শান্তিতে নোবেল জয়ী। দেশের শেয়ারবাজারের দুর্বলতা ও দূরবস্থা সম্পর্কে তিনি বিলক্ষণ জানেন। সেই প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ করা আবশ্যক, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বরাবরই দুর্বল অব্যস্থাপনায় জর্জরিত বিশৃঙ্খল সর্বোপরি লুটেরাদের আস্তানা। বিগত সরকারের শাসনামলে দেশের পুঁজিবাজার হয়ে পড়েছিল সরকারের একাধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যে কারণে বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না বললেই চলে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সময় সময় স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে ক্ষোভ-বিক্ষোভসহ অবরোধ কর্মসূচিও পালন করেছেন। অনেকেই এমনকি নিঃস্বও হয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারে সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো হলো– প্রথমত, বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যেসব বিদেশী বা বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে যেমনÑ ইউনিলিভার, সর্বোপরি যেসব কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে সেগুলোকে দ্রুত শেয়ারবাজারে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গত ২০-৩০ বছরে বেসরকারি খাতে যেসব ভালো বড় কোম্পানি গড়ে উঠেছে তাদের প্রণোদনা দিয়ে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। তৃতীয়ত, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। চতুর্থত, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি- অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পঞ্চমত, বড় কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিবর্তে বন্ড বা বাজারে শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহে যাতে আগ্রহী হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত বছরের ১৯ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো তার প্রথম কাজ। তিনি স্বীকার করেছেন, গত এক দশকে পুঁজিবাজারের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণও শুরু করা হয়েছে ইতোমধ্যে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সেসব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে। ফলে, পুঁজিবাজারে স্বস্তির প্রভাবে মূল্য ও সূচক উভয়ই বাড়বে বলে আশা করা যায়। তাতে পুঁজিবাজারে অর্থলগ্নি করতে বিনিয়োগকারীরা হবেন উৎসাহিত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ৫টি নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে গতি ফিরে আসবে বলেই প্রত্যাশা।
প্যানেল