
রোগীর চিকিৎসা তথা সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একজন সেবিকা বা নার্সের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নার্সের স্বল্পতা বা ঘাটতি স্বাস্থ্য খাতেরই ঘাটতি। সোমবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত হয়েছে দেশে। সেইসঙ্গে নানা বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে দেশের সার্বিক চিত্র, যার অনেকটাই উদ্বেগ জাগানোর মতো। বেশি কাজ করেও পেশাটির ৯৬ শতাংশ কর্মী কম বেতন পাচ্ছেন। নার্সদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করা সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। নার্স সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার মান এবং পেশাগত অনুশীলন উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে হবে। দেশে প্রয়োজনের চেয়ে ৮২ শতাংশ নার্স কম। জনসংখ্যার বিবেচনায় দেশে এখন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স থাকা দরকার। আছে মাত্র ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন। যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৮২ শতাংশ কম। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের চিকিৎসাসেবার মান অসন্তোষজনক হওয়ার অন্যতম একটি কারণ নার্স-সংকট।
সাধারণ মানুষের ভেতরে নার্সদের কর্মপরিধি সম্পর্কে ভুল তথ্য রয়েছে। তাদের কাজ শুধু ওষুধ খাওয়ানো ও ইনজেকশন দেওয়া নয়, মৌলিক নার্সিং সেবার তালিকা বেশ দীর্ঘ। একজন নার্স প্রতি কর্মদিবসে কত সংখ্যক রোগীকে সেবা দান করতে সক্ষম, সেটি বিবেচনাযোগ্য। ছয়জন রোগীকে সেবা দেওয়ার কথা যার, তিনি ৫০ জনকে সেবা দিতে গেলে প্রত্যাশিত মানসম্পন্ন সেবা প্রদান সম্ভব হতে পারে না। মুশকিল হচ্ছে রোগীর সুস্থতা, বলা যায় জীবন মরণ বাস্তবতা অনেকাংশে নার্সের সঠিক পরিচর্যার ওপর নির্ভরশীল। এখানে দুর্বলতা থাকার মানেই হচ্ছে রোগীর সুস্থতা ও জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩। অর্থাৎ, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করবেন তিনজন নার্স। তাদের সঙ্গে থাকবেন আরও পাঁচজন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী। এই অনুপাত ঠিক থাকলে চিকিৎসাসেবা সর্বাঙ্গীণ সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। বাংলাদেশে এই অনুপাত ঠিক নেই। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ জন চিকিৎসক, ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স এবং ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ জন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। রাতারাতি নার্স সংকট কাটানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন হাসপাতালে নার্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দানের তাগিদ থাকলেও সেটি স্বল্পতম সময়ের ভেতর বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নানা কারণে। প্রথমত নার্সিং শিক্ষা ও নার্সের ঘাটতি। প্রশিক্ষিত দক্ষ নার্স গড়ে তোলা না গেলে স্বাস্থ্য খাত বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই সার্বিক বিষয়ে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকল্প নেই।
প্যানেল