
সম্পাদকীয়
মতভেদ ও বহুমত থাকবে, কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সকল দেশপ্রেমিকের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। সবার ওপরে দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণ এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। তাই বারবারই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ও রাজিৈনতক শক্তির কাছ থেকে জাতীয় ঐক্যের তাগিদের কথা শোনা যায়। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে শান্তির বার্তা দিয়ে শান্ত থাকার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, বৈঠকের মূল বার্তা হচ্ছে, আমাদের নিয়ে কিছু সংঘবদ্ধ অপপ্রচার হচ্ছে। জাতির স্থিতিশীলতার জন্য প্রধান উপদেষ্টা সবার ঐক্যের কথা বলেছেন। ছাত্র-জনতা, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সবার কাছে তিনি জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যেন কোনো রকম অবস্থার সৃষ্টি না হয়, যার মধ্য দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি হয়। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। কারণ, আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য, বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা এর স্থিতিশীলতা যারা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতিহত করার জন্য আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
এটি স্পষ্ট যে, বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, হানাহানিসহ দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বিএনপি নেতারা বিভাজনের পথ এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টাও চান জাতির একতা। দেখা যাচ্ছে উভয় পক্ষের চাওয়া অভিন্ন। ফলে, দেশবাসী শুভ উদ্যোগের প্রত্যাশা করতেই পারেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, ‘সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার কথাও বলেছি। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর পরিষদ নিয়ে অতি দ্রুত উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করবেন।’
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। আদর্শচ্যুত রাজনীতি সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছু দেয় না। নেতৃত্ব অযোগ্য, অদক্ষ হলে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য। দলে গণতন্ত্র চর্চাহীনতার সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা ঢুকে পড়ে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নানা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নানাভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইবে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে।