ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিদেশগামী তারুণ্য

-

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৯ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশগামী তারুণ্য

সম্পাদকীয়

শুক্রবার ছুটির দিনে জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় ছোট্ট একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি ছোট, কিন্তু এর গুরুত্ব বিশাল। ৫৫ শতাংশ তরুণ দেশে থাকতে চান না। এর সরল অর্থ অধিকাংশ তরুণ দেশের বাইরে চলে যেতে চান। তারা নিজভূমে পরবাসী ভাবেন নিজেদের? আগামী দিনের বাংলাদেশ যাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে, তারা দেশেই থাকতে চান না। সংবাদটি উদ্বেগজনক, মন খারাপ করে দেওয়ার মতোই। বিষয়টি খোলাসা করা যাক। ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক গবেষণায় পাওয়া গেছে এ তথ্য। গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে উদ্যোগকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল। একদিকে এটি দেশের জন্য যেমন বেদনাদায়ক, অন্যদিকে ব্রিটিশ কাউসিল, স্পষ্ট করে বললে ব্রিটেন এবং অবধারিতভাবে বিশে^র উন্নত দেশগুলোর জন্য আশাব্যঞ্জক। কেননা, বিদেশগামী তরুণদের বড় একটি মেধাবী অংশই সেসব দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে ইচ্ছুক। 
গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তরুণদের ৫৫ শতাংশ পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে চায়। চাকরির সুযোগ কম থাকার কারণে দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশাও বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি খাত, দেশী-বিদেশী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মিডিয়া ও তরুণ জনগোষ্ঠীর ১২০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘আজ  নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০২৪’ প্রকাশ করতে পেরে আমরা গর্বিত। এ রিপোর্ট তরুণদের অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে তাদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

সরকারি-বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শিক্ষা, দক্ষতা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্রিটিশ কাউন্সিল।’ দেশে কর্মসংস্থানের অভাবের কথা বললে সত্যের একপাশই আমরা দেখব। সত্যের চারপাশ দেখতে চাইলে আমরা নিশ্চয়ই জানব যে, সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং জীবনের নিশ্চয়তাও দেশের সীমানা পেরোনোর বড় কারণ। আমরা বলি না যে, আরও উন্নত শিক্ষা ও উজ্জ্বল কর্মযোগের প্রয়োজনে দেশের বাইরে তারা যাবে না। নিশ্চয়ই যাবে, কিন্তু শিক্ষা-গবেষণা সমাপ্ত করে নিজের দেশের প্রয়োজনেই ফিরে আসা চাই।

প্রতিবছর যত তরুণ বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে চলে যায়, তার কত ভাগ ফিরে আসে, এমন পরিসংখ্যান না থাকলেও এটা সুনিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া সম্ভব যে, খুবই অনুল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষই বিদেশ থেকে দেশে ফেরে। তাই আমাদের ভাবনা ও পরিকল্পনা এমনটাই হতে হবে, যাতে করে নিজের দেশই একজন তরুণ শিক্ষার্থীর কাছে সর্ববিচারে প্রধান হয়ে উঠবে। এ শুধু দেশপ্রেমের বিষয় নয়, এটি দেশকে গঠন, নির্মাণ ও উন্নত স্তরে নিয়ে যাওয়ার ব্রত। সেই প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ যদি শুরু না করা যায়, তবে বিদেশগামী তারুণ্যের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়বে এবং এ নিয়ে আমাদের হা-হুতাশ করে যেতে হবে।

×