ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ জরুরি

জান্নাতুল ফেরদৌস তানজিনা

প্রকাশিত: ২০:৫২, ৯ জুলাই ২০২৪

নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ জরুরি

নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ জরুরি

বেশ কয়েক মাস যাবৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের ছবি। কখনোবা ছবি দিয়ে স্বজনরা এই সকল শিশুর সন্ধান করছে। আবার কখনো রাস্তা-ঘাটে বিধ্বস্ত বা অচেতন অবস্থায় বাচ্চা পাওয়া গেছে এমন খবরের দেখা মিলছে। এসব শিশু পরিষ্কার করে নিজের পুরো পরিচয় বলতে পারে না এবং তারা কোথায় ছিল বা কিভাবে এখানে এসেছে, সে বিষয়েও কিছু বলতে পারে না। এসব শিশুর আনুমানিক বয়স ৬-১৫ বছরের মতো হবে। 
শিশু হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজের ঘটনা বিগত চার-পাঁচ মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে চলছে। এমনও হচ্ছে- দিনে ৩-৪ শিশুর হারানো বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০-৪০ শিশু নিখোঁজ হয়েছে এবং বিগত ৪-৫ মাসে কম হলেও দুই শতাধিক শিশু নিখোঁজ হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া এসব শিশুর সন্ধান এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে মাদ্রাসার ছাত্রদের হারানোর বিষয়টি বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুল অথবা কোচিং সেন্টারে ক্লাস করতে গিয়ে শিশুরা আর বাড়ি ফিরে আসেনি। কেউ বা আবার বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। 
অনেক দিন যাবত শিশুদের পাশাপাশি উঠতি বয়সের মেয়েদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়াও মোটা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গার্মেন্টস কর্মীদের বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। যাদের বেশিরভাগই অসচ্ছল পরিবারের সদস্য। পাচারকৃত এক নারী কৌশলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ সক্রিয় পাচার চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যশোর সীমান্ত দিয়ে নারীদের ভারত পাচার করে যাচ্ছে।

এছাড়াও বিয়ের নাম করে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির পাহাড়ি তরুণীদের বিদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। বহু বছর যাবৎ চীনসহ কয়েকটি দেশে এক সন্তান নীতি কার্যকর থাকায় বিয়ের পাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলস্বরূপ চেহারা ও খাদ্যাভ্যাসে মিল থাকায় বাংলাদেশের পাহাড়ি মেয়েদের ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সেসব দেশে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। 
মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর ৩নং আইনের ৭ম ধারা মতে, সংঘবদ্ধ মানবপাচার অপরাধের দ- মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ- বা ন্যূনতম ৭ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ন্যূনতম ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের তেমন নজরদারি দেখা যায়নি। তবে চট্টগ্রামে তিন নারী পাচারকারী ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। খুব সম্ভবত এটা বড় কোনো দালালচক্র দাঁড়া পরিচালিত পূর্ব পরিকল্পিত কার্যক্রম। যার বলি হচ্ছে বেশিরভাগ শিশু ও নারী। যে কোনো উপায়ে এই নারী ও শিশু পাচার কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে হবে।

এমতাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা। পারিবারিক, সামাজিক এবং ব্যক্তি সচেতনতাই পারে এটি প্রতিহত করতে। পাশাপাশি সরকার এবং প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি মিডিয়াগুলো বেশি বেশি পাচারবিরোধী প্রচার চালালে জনগণকে দ্রুত সচেতন করা সম্ভব। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিশু ও নারী পাচার প্রতিরোধ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

×