স্মার্ট বাংলাদেশ হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী
উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামীতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে, তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশ দিন দিন স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আছি। যেখানে আমরা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং রোবটিক্স নিয়ে ভাবছি
স্মার্ট বাংলাদেশ হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী, উন্নত ও আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোর শামিল। স্মার্ট রাষ্ট্র বলতে আমরা বুঝি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে কোনো বৈষম্য ও ভোগান্তি থাকবে না। বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সরকার চার ভাগে ভাগ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান।
দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে এবং অর্থনীতির সকল কার্যক্রম প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হবে। স্মার্ট গভর্নমেন্ট ইতোমধ্যে অনেকটা হয়ে গেছে। বাকিটা করে নিতে হবে। এভাবেই গোটা সমাজই একদিন স্মার্ট সোসাইটি হবে। এ বিবেচনায় ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গেছে। এজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা এ বঙ্গীয় বদ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে সুন্দর, সুস্থ ও স্মার্টলি বাঁচতে পারে, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সর্বপ্রথম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা করে। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।
গত ১৫ বছরে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। অনেক সেবা অনলাইনে মিলছে। ভার্চুয়াল লেনদেন বাড়ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রার কথা ঘোষণা করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সরকার বলছে, দেশের তরুণ প্রজন্মই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে দক্ষ জনশক্তি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সরকারের দাবি, ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টার ও ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। সরকারি ওয়েবপোর্টাল তথ্য বাতায়নে ৪৬ হাজারের বেশি সরকারি অফিস যুক্ত আছে। ৪৬টি হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে বছরে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখ, ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬১ লাখে। মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স খাত সম্প্রসারিত হয়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম হচ্ছে অনলাইনে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে সরকারের প্রদত্ত একটি প্রতিশ্রুতি বা সেøাগান, যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি ভিত্তি হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকারের মাধ্যমে সব সেবা মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা চারটি মাইলস্টোন দিয়েছেন।
এগুলো হচ্ছে : ১) ২০২১ সালের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ; যা অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২) ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। ৩) ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এবং ৪) বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালের জন্য। স্মার্ট শহর বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এক শিক্ষার্থী, একটি ল্যাপটপ, এক স্বপ্নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ টাস্কফোর্সের চেয়ারপারসন হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি ২৯ জন হচ্ছেন সদস্য। টাস্কফোর্সের কার্যাবলি হচ্ছে : অগ্রসরমান তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান করা।
স্মার্ট এবং সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক পরিম-লে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিধিবিধান প্রণয়নে দিকনির্দেশনা প্রদান প্রভৃতি। স্মার্ট বাংলাদেশ পরিকল্পনাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ সম্মেলন’ শুরু করেছে। ২০২৩ সালে এ সম্মেলন প্রথম শুরু হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এক কথায় সব কাজই হবে স্মার্ট।
স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু একটি সেøাগান নয়, আগামী দুই যুগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ। সরকারের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল গ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে অনেক বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তখন বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানের চেয়ে ৫-১০ গুণ বাড়তে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের লক্ষ্য।
দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার তথা মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ প্রতিষ্ঠা ও উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো হলোÑ ১) বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ ভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠিত হবে।
এটি বাস্তবায়ন করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ২) অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলা এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর ভারনারেবল এক্সেপশন (ডাইভ) উদ্যোগের আওতায় আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের। ৩) শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ এর আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
যা বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৪) স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি স্থাপন। বাস্তবায়ন করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৫) ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট, মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসেবে প্রস্তুত করা।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ৬) অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেশন অব টুমোরো (এসেট) প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এটি বাস্তবায়ন করবে। ৭) বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা। এটি বাস্তবায়ন করবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ৮) সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এটি বাস্তবায়ন করবে। ৯) এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠা।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ তা বাস্তবায়ন করবে। ১০) সেলফ অ্যামপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেইনরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্ল্যাটফর্ম স্থাপন। এটি হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে। ১১) কনটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাংন্ড লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপন। তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ন করবে। ১২) সার্ভিস এগ্রিগ্রেটর ট্রেইনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামোনির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি করা।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এটি বাস্তবায়ন করবে। ১৩) সকল ডিজিটাল সেবাকে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডে নিয়ে আসা। এটি বাস্তবায়নে থাকবে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ১৪) ডেটা নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল সার্ভিস আইন, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন, এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) আইন, ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ অ্যাকাডেমি (আইডিয়া) আইন, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি আইন ও জাতীয় স্টার্টআপ পলিসি প্রণয়ন। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য বিশ্বের সকল উন্নত দেশ প্রস্তুত হচ্ছে। আসন্ন এই বিপ্লবের মাধ্যমে সকল দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও সুদঢ় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ইন্টারনেট অব থিংসের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। তাই এই শিল্প বিপ্লব থেকে লাভবান হওয়ার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বৈশি^ক ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন এবং উৎপাদন ব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবলকে এই পরিবর্তনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে দেশের সবটাই উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা, যাকে এক কথায় ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। দেড় যুগ আগে হাতে নেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা এখন শতভাগ সফল।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। উন্নত বিশে^র দেশগুলো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামীতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে, তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারবে।
বাংলাদেশ দিন দিন স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আছি। যেখানে আমরা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং রোবটিক্স নিয়ে ভাবছি। দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিশেষায়িত বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। অভূতপূর্ব উন্নতির কারণে বাংলাদেশ এক সময় গোটা বিশে^র উন্নত রাষ্ট্রগুলোর একটি হতে পারে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়