![সারাদেশে তাপপ্রবাহ সারাদেশে তাপপ্রবাহ](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/editor-picture-final-2404151430.jpg)
সম্পাদকীয়
আবহাওয়া অধিদপ্তর এপ্রিল মাসব্যাপী সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে। একইসঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধিতে ভ্যাপসা ও স্যাঁতসেঁতে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এর ফলে রাজধানীমুখী দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে বহুলাংশে। ঈদের আগে আকস্মিকভাবে কালবৈশাখীসহ ঝড়বৃষ্টি বয়ে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চল ব্যতিরেকে প্রায় সর্বত্র। দক্ষিণাঞ্চলের ৯ জেলায় কমপক্ষে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন কয়েকজন। অনেক স্থানে গাছপালা ভেঙে রাস্তা অবরুদ্ধ হওয়ায় ব্যাহত হয়েছে যানবাহন চলাচল। বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা।
বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ৮জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট, ফসল ও সব্জির খামার। নৌকাডুবির ঘটনাও আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি মাসে দেশব্যাপী তাপপ্রবাহের পাশাপাশি আরও কয়েকটি তীব্র কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ, অধিক পরিমাণে কালবৈশাখী, বৃষ্টিপাত সেইসঙ্গে বজ্রপাতের কারণের জন্য দায়ী করা হয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকিকে।
বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা আদিকাল থেকে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঝড়-ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি-বন্যা, নদীভাঙন, অনাবৃষ্টি-খরা ইত্যাদি মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত। তারা প্রকৃতির সদা পরিবর্তনশীল গতিপ্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে জীবন-যাপন অতিবাহিত করে থাকেন। সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বাংলাদেশকে তারা পরিণত করেছেন একটি জলবায়ু অভিযোজন বাসভূমিতে।
এসব আমলে নিয়ে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ২০০৯ সালে গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট। এর আওতায় জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন- উভয় ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ৬৮টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০২৩-২০৫০ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নে গ্রহণ করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা।
জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ২৩০ বিলিয়ন ডলার বা ২৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সরকার জিডিপির ৬-৭ শতাংশ প্রতিবছর জলবায়ু অভিযোজনে ব্যয় করে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাপ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকিতে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। প্রতিবছর একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, ঝড়-ঝঞ্ঝা-অতিবৃষ্টি-বন্যা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রায়ই আঘাত হানে, বিশেষ করে দেশের সুবিস্তৃত সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে। এর অনিবার্য প্রভাব পড়ে সারাদেশেই। দেশে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয় ৭১ লাখ মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে এক কোটি ৩৩ হাজারের বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বাণিজ্য এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিও বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে উন্নত বিশ্বের তীব্র অনীহা। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ জলবায়ু ক্ষতি মোকাবিলায় কয়েক মিলিয়ন ডলার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ইতোমধ্যে। এর পাশাপাশি জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা ইতিবাচক।