ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

স্মার্ট নগরায়ণ ও আবাসন

এ কে এম এ হামিদ

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৪ অক্টোবর ২০২৩

স্মার্ট নগরায়ণ ও আবাসন

বাংলাদেশের ন্যায় দ্রুত বর্ধনশীল নগরায়ণ ও নগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ

ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে পরিকল্পিত নগরায়ণ জরুরি। বিক্ষিপ্তভাবে নগরায়ণে বাহ্যিক উন্নতি হলে নগরগুলো নানামুখী সংকটে হবে বিপর্যস্ত। যানজট, জলাবদ্ধতার পাশাপাশি অগ্নি ও ভূমিকম্পের ন্যায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বিদ্যমান নগর কাঠামোতে প্রায় অসম্ভব। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা ১৯৯৩ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন ও সমন্বয় করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। যেখানে নগরে ব্যক্তিগত প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নীতি চালু হয়েছে। মূল্যবান কৃষি জমি রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়

বাংলাদেশের ন্যায় দ্রুত বর্ধনশীল নগরায়ণ ও নগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ বিবেচনায় নগর অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টতই বলা আছে– রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বস্তুগত ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানের উৎকর্ষ সাধন। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যক্তি ও সমাজকে পরিবেশের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়ায় অবতীর্ণ হতে হবে এবং পরিবেশের যত্ন নিতে হবে। কেননা, জনগণের কার্যক্রমে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এটি স্পষ্ট যে, শিল্পবিপ্লব ও শিল্পায়ন, নগরায়ণ, প্রযুক্তিবিপ্লব, সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং ভোগসর্বস্ব  উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের দারিদ্র্যপীড়িত অর্থনীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও জীবনমানে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব তারই একটি উদাহরণ হতে পারে, যেখানে অপরিকল্পিত নগর অর্থনীতি বহুলাংশে দায়ী। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে পৃথিবীকে কিভাবে বাসযোগ্য নগর, অর্থনীতির বিকাশ ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা যায়, সে বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বস্তুত নগর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এখন আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে পৃথিবীর সম্পদরাশি ও সম্পদের উৎস যেমন সীমাবদ্ধ, তেমন তার দূষণ সহ্য করার ক্ষমতাও অসীম না। 
জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার অভীষ্ট লক্ষ্য-১১ এ বলা আছে- ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও মূল্যসাশ্রয়ী আবাসন এবং মৌলিক সুবিধায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাসহ বস্তির উন্নয়ন সাধন; অরক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, অসমর্থ (প্রতিবন্ধী) ও বয়োবৃদ্ধ মানুষের চাহিদার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখে প্রধানত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের সম্প্রসারণ দ্বারা সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতিসাধনের মাধ্যমে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, সুলভ ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থায় সকলের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই নগরায়ণ ব্যবস্থার প্রসার ও অংশগ্রহণমূলক, সমন্বিত ও টেকসই জনবসতি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রচেষ্টা জোরদার, বায়ুর গুণাগুণ এবং পৌর ও অন্যান্য বর্জ্যব্যবস্থাপনার প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদানসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে নগরসমূহের মাথাপিছু পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনা, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থানে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার প্রদান করতে হবে। 
মানুষের লোভ ও তথাকথিত উন্নয়নের যে কোনো প্রক্রিয়ার অনিবার্য পরিণতি হলো কমবেশি পরিবেশ দূষণ। আধুনিক উন্নয়নের নামে কলকারখানা বাড়লে তাতে বায়ুদূষণ যেমন বাড়বে, তেমনি হ্রাস পাবে প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই বলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে মানুষ প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরে যাবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বর্তমানে উন্নয়ন দর্শন অনেকটা শহরভিত্তিক, আয়ভিত্তিক ও ভোগভিত্তিক হওয়ায় এ ধরনের উন্নয়নের কুফল পরোক্ষভাবে মানুষকে প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরিয়ে নিচ্ছে। প্রকৃতির নির্মমতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে এখন মানুষ উন্নয়ন বলতে বোঝে বড় বড় অট্টালিকার শহর নির্মাণ, শপিং মল, চকচকে বাড়ি, ফ্ল্যাট, নতুন গাড়ি বা চাতুর্যপূর্ণ নগরকে।

উন্নয়নের এ ধারণাটি অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিধায় অনুন্নত বা উন্নয়নশীল জাতিরাষ্ট্রগুলো এ ধরনের উন্নয়নে জাতীয় আয় প্রবৃদ্ধির মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করে থাকে। এ ধরনের উন্নয়ন ধারণা বাস্তবিক অর্থে অনগ্রসরতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যথার্থই বলেছেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরে অসাম্য ও তার থেকে উদ্ভূত বৈষম্য কল্যাণমূলক অর্থনীতির দর্শন হতে পারে না। যা স্থিতিশীল উন্নয়নের অন্তরায়। এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো মূল পুঁজিপতিদের লাভের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গৃহীত হয়। কিন্তু স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয়। বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়টি মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ তার মধ্যে অন্যতম। এ ধরনের প্রকল্পের বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যে দেশীয় প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাড়ছে তাপমাত্রা। জৈব বৈচিত্র্যের বিরূপ প্রভাবে আম, পেঁয়ারা, নারিকেল, সুপারির ন্যায় দেশীয় ফলদ উৎপাদন ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। অন্যদিকে, মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল টাওয়ার নগরায়ণে ক্যান্সারের মতো ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। পানির প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংস করে ক্রমবর্ধমান নগর বিকাশ ও শহুরে মানুষের চাহিদা বিবেচনায় ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন দেশকে ক্রমান্বয়ে মরুপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প উৎস হিসেবে নগর বর্জ্যরে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না করতে পারায় সৃষ্টি হচ্ছে বায়ুদূষণ, যা জনস্বাস্থ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিষয়টি স্থিতিশীল নগরায়ণের ক্ষেত্রে অন্তরায়।
নগর অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিতে ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা’ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, স্থানীয় সরকার নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা, ব্যবসায়িক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি বিষয়ে উপযুক্ত নীতি ও প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু আমাদের মতো নানা সমস্যায় জর্জরিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় নগর উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ফলে, সিটি করপোরেশন বা পৌর নগরায়ণের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারব্যবস্থার ভূমিকা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না। সে কারণে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ নানামুখী সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি মূল্যবান কৃষি জমি নষ্ট করছে।

অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত কারণে সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সুষ্ঠু পয়ঃ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। অপরিকল্পিত আবাসন ও সড়ক নির্মাণের কারণে প্রতিটি নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। যেখানে মূল্যবান কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। নগরগুলোতে পরিবহন ব্যবস্থায় পৃথক লেন ব্যবস্থা না থাকায় রোগী বা অত্যাবশ্যকীয় সেবায় বিঘœ হচ্ছে। রিক্সা ও থ্রি হুইলারের ন্যায় স্বল্পগতির যানের আধিক্য, তাতে জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগ এক ধরনের জাতীয় অপচয়। যা জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। 
এসব দিক বিবেচনায় এসডিজির অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার-৮ এ বলা আছে– জাতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী মাথাপিছু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখা, উচ্চমূল্য সংযোজনী ও শ্রমঘন খাতগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানসহ বহুমুখিতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার উচ্চতর মান অর্জন, আর্থিকসেবা সহজলভ্য করা এবং উৎপাদনশীল কর্মকা-, শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি, ব্যবসায়িক উদ্যোগ, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন সহায়ক উন্নয়নমুখী নীতিমালা প্রবর্ধন এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রমিত ব্যবসায়িক মান অনুসরণ ও ক্রমোন্নতিতে উৎসাহিত করা, কর্মে, শিক্ষায় বা প্রশিক্ষণে নিয়োজিত নয়। এমন যুবকদের অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করা, জবরদস্তিমূলক শ্রমের উচ্ছেদসাধন, মানবপাচার ও আধুনিক দাসত্বের অবসান, স্থানীয় সংস্কৃতি ও পণ্যসম্ভারের প্রবর্ধন সহায়ক ও কর্মসৃজনমূলক টেকসই পর্যটনশিল্প প্রসারের কথা বলা হয়েছে। 
স্বল্প আয়তনের ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে পরিকল্পিত নগরায়ণ জরুরি। বিক্ষিপ্তভাবে নগরায়ণে বাহ্যিক উন্নতি হলে নগরগুলো নানামুখী সংকটে হবে বিপর্যস্ত। যানজট, জলাবদ্ধতার পাশাপাশি অগ্নি ও ভূমিকম্পের ন্যায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বিদ্যমান নগর কাঠামোতে প্রায় অসম্ভব। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা ১৯৯৩ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংশোধন ও সমন্বয় করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। যেখানে নগরে ব্যক্তিগত প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নীতি চালু হয়েছে।

মূল্যবান কৃষি জমি রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আগামী প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তায় মূল্যবান ৮৮ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমি  যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। এলোপাতাড়ি বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে প্রতিবছর ১ লক্ষ হেক্টর আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সমগ্র বাংলাদেশ কৃষি জমির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে দারিদ্রপীড়িত নগরে পরিণত হতে পারে। 
সেজন্য আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই আবাস ভূমি রেখে যাওয়ার স্বার্থে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে  গ্রামপর্যায়ে বিস্তৃত করে দেশের প্রতিটি গ্রামে পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নি¤েœাক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। 
১। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সামগ্রিক কার্যক্রম গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলায় বিস্তৃত করা। সেই প্রেক্ষিতে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দপ্তর বা উপ-সহকারী স্থপতির দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। যদি এই মুহূর্তে সকল উপজেলায় হাউজিং অধিদপ্তরের শাখা অফিস খোলা না যায়, তাহলে উপজেলা পর্যায়ের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করে কার্যক্রম শুরু করা যায়।
২। গ্রামীণ জনপদের ঘরবাড়ি, রাস্তা, পুকুর, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিটি থানা/ইউনিয়নে সার্ভে করে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা।
৩। ‘কৃষি জমি রক্ষা কর- পরিকল্পিত গ্রাম গড়’ এই রাষ্ট্রীয় নীতিরভিত্তিতে এলোপাতাড়ি ঘরবাড়ি নির্মাণে নিরুৎসাহিত করে ক্লাস্টার ভিলেজ  নির্মাণে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা। 
৪। প্রস্তাবিত ক্লাস্টার ভিলেজে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত নকশা অনুযায়ী ব্যক্তি বা যৌথ মালিকানাধীন বহুতল বাড়ি নির্মাণের সুযোগ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। 
৬। শিক্ষা, চিকিৎসা, সেবা ও আবাসন ক্ষেত্রগুলোর পৃথক জোন রেখে নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করা। 
৭। বঙ্গবন্ধুর ‘আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান’ শিক্ষা দর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের মানুষকে কারিগরি ও  বৃত্তিমূলক, কৃষি শিক্ষার আওতায় দক্ষ জনবল গঠনসহ সমগ্র জাতির মধ্যে দক্ষতা সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এতে দেশের প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষকে বিভিন্ন পেশায় কর্মদক্ষতায় শিক্ষিত করা সম্ভব হবে এবং জাতীয় প্রোডাক্টটিভিটিই বৃদ্ধি পাবে। 
৮। গ্রামীণ পর্যায়ে সকল ইনফর্মাল অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ফর্মাল অর্থনৈতিক কার্যক্রমভুক্ত করে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীলকরণে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের কর্মপরিধি বিস্তৃত করা। 
৯। নতুন প্রজন্মের আগামী সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি জমি রক্ষা ও পরিকল্পিত স্মার্ট গ্রাম গড়তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ’ এবং পূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘গৃহায়ন’ অংশকে একত্রিকরণের মাধ্যমে স্মার্ট গ্রাম উন্নয়ন ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা।
১০। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পকে দীর্ঘমেয়াদি সেবায় রূপান্তর ও অধিকতর সেবামূলক করার লক্ষ্যে বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ এবং অবশিষ্ট খাস জমিতে কৃষি সমবায় ফার্ম গঠন করে দেওয়া।
১১। শহরের কর্পোরেট ধনী শ্রেণি কর্তৃক কৃষি জমিতে নির্মিত সকল রিসোর্টসমূহ ভেঙে ফেলা এবং আগামীতে কৃষি জমির অপব্যবহার রোধ করে রিসোর্ট নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা। 

লেখক : উন্নয়ন গবেষক ও সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)

×