ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অমূল্য পানির উৎস

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১৩ আগস্ট ২০২৩

অমূল্য পানির উৎস

.

গণমাধ্যমে খুলনা নগরে পানির স্তর নামার দুঃসংবাদ এসেছে। নলকূপের জায়গায় বসছে পাম্প। পানির স্তর এতটাই নেমে গেছে যে, এখন পাম্প বসিয়ে মাটির অত্যন্ত গভীর থেকে পানি টেনে নিতে হচ্ছে! এটি আপৎকালীন ব্যবস্থা হতে পারে, কিন্তু কোনোক্রমেই দৈনন্দিন ব্যবস্থা নয়। এই অপরিণামদর্শী পানি উত্তোলনের কারণে পানির ঘাটতি হবে ভূগর্ভে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরতা ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে তা মহাবিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূপৃষ্ঠে পানির পুনর্ভরণ ঘটছে না। উপকূলীয় অঞ্চলে এই পুনর্ভরণের পরিমাণ আরও কম।

উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে খুলনার পানির একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উচ্চমাত্রায় লবণ, আয়রন আর্সেনিকের কারণে প্রথম দ্বিতীয় স্তরের ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে পারেন না খুলনা নগরবাসী। ফলে, জীবনরক্ষার পানি তুলতে নলকূপের বদলে সাবমারসিবল পাম্পে ঝুঁকছেন বাসিন্দারা। অথচ ১০ বছর আগেও নগরে ১২০-১২৫ ফুট গভীরতায় নলকূপ দিয়ে পানি তোলা যেত। প্রতিবছর গড়ে ছয় ইঞ্চি করে পানির স্তর নামায় এখন সেটি ১৩০ থেকে ১৩৫ ফুটে ঠেকেছে। শুষ্ক মৌসুমে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও ভয়াবহ।  বাড়ি বাড়ি বসানো চলছে সাবমারসিবল পাম্প। পানির স্তর নামায় সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা ওয়াসার জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। পানিবিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, ১০-১৫ বছর পর খুলনায় পানির জন্য হাহাকার হতে পারে।

ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশে বা ইকোসিস্টেমে ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হয়। পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাওয়ার ফলে পানি তোলার ব্যয় বেড়ে যায় এবং পানির প্রাপ্যতা কমে যায়, এমনকি ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পানি তোলা চলতে থাকলে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ে। উভয় রকম ঝুঁকির কথা আমাদের সবারই জানা। সেজন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থিত বিভিন্ন উৎস থেকে পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয় সব দেশেই। পানি সমস্যার সমাধান বিষয়ে খুলনা পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ গত বছর একটি দাবি জানিয়েছিল। সেটি হলো- খুলনা নগরে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ময়ূর নদের কোনো প্রবাহ নেই। নদটি খনন করে মিষ্টি পানির প্রবাহ বানানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বহু আগে থেকেই সরকারি ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবহারের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। সেটির কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি, যা দুঃখজনক। পানিপ্রাপ্তির ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখা প্রাথমিক কাজ। এরপরেই হলো চাহিদা অনুযায়ী শোধনাগার বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়ে পানি শোধন করা। যতদিন শস্তায় পানি পাওয়ার মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন দেশে ভূগর্ভস্থ পানির ঝুঁকিপূর্ণ উত্তোলন বা অপব্যবহার চলতেই থাকবে। যা দেশকে ভবিষ্যতে সমূহ বিপর্যয়ের দিকেই নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা।

×