ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২১:০১, ৫ জুন ২০২৩

ঢাকার দিনরাত

ঢাকার ৮৬ শতাংশ জলাধার ভরাট হয়েছে গত ২৮ বছরে; মহানগরীর সবুজ এলাকা

ঢাকার ৮৬ শতাংশ জলাধার ভরাট হয়েছে গত ২৮ বছরে; মহানগরীর সবুজ এলাকা সবচেয়ে বেশি কমেছে গত ৮ বছরে। আশির দশকে যখন উচ্চশিক্ষার্জনের জন্য ঢাকায় আসি, তখনো এই শহরে ছিল অন্তত দুই হাজার পুকুর! অবিশ^াস্য শোনালেও সত্যি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দখলবাজি ও মানুষের পরিবেশবিষয়ক অসচেতনতার কারণে সেসব পুকুর হারিয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও এ শহরে পুকুর ছিল ১০০টি, সেই সংখ্যা এখন ৩০টির কম। ঢাকা শহরের যে ভয়াবহ দাবদাহ, তার অন্যতম কারণও জলাশয় কমে যাওয়া। তাই এই ৩০টি পুকুরকে রক্ষা করার দায় ঢাকাবাসীর ওপরেই পড়ে

এই জুনে গরমে খুন হয়ে যাচ্ছে কর্মস্পৃহা। ঢাকা এর আগে কি এমন তাপদাহের স্বাদ নিয়েছে? বেশ রাতে তাপমাত্রা দেখলাম ৩৪, কিন্তু গুগল বলছে আমাদের দেহে তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস! শনিবার রাতের কথা বলছি। দিন ও রাতে গরমের অনুভূতি আলাদা করার উপায় নেই। গভীর রাত পর্যন্ত থাকছে গরমের তেজ। টানা কয়েকদিন ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহের কারণে গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু ডলার সংকটে জ্বালানির অভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তাই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। আরও চার-পাঁচটা দিন নাকি এমন সুতীব্র গরম থাকবে। ওদিকে মন্ত্রী বলছেন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে (মানে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসতে) লেগে যাবে দুটি সপ্তাহ। বেশ কঠিন একটা পরিস্থিতি। তাপপ্রবাহ, লোডশেডিং আর মাত্রাছাড়া যানজট নিয়ে ঢাকার বড়ই করুণ দশা।

পরোক্ষ ধূমপানে রাজধানীর শিশু
দু’বছর আগের খবর, এখন নিশ্চয়ই পরিস্থিতি আরও খারাপ? ধূমপানে শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, তার প্রমাণ মিলেছিল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকীর এক প্রবন্ধে। ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার: ঢাকা, বাংলাদেশের একটি জরিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে এমন চিত্র ফুটে উঠেছিল। এতে বলা হয়, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ৯৫ জন। সে সময়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মায়ের শরীর থেকে নবজাতক শিশুর শরীরেও নিকোটিনের প্রভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েই যায়। নিকোটিনের প্রভাব শিশুদের শরীরে ভীষণ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয় ছোট শরীর। আর একই সঙ্গে বড়দের দেখে অল্প বয়সেই নিজেরাই ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, যা আরও বেশি ভয়ংকর।
ওই ২০২১ সালেই বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছিল, দেশে ১৫ বছর বা তার কম বয়সী ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশু তামাকজনিত রোগে ভুগছে। এদের ৬১ হাজারেরও বেশি (১৪ শতাংশ) শিশু বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। বাসায় পরিবারের বড়রা ধূমপান করছে আর তাদের কাছাকাছি বসে শিশুরা খেলা, লেখাপড়া কিংবা দৈনন্দিন কাজকর্ম করছে। এদেশে বেশ স্বাভাবিক দৃশ্য এটি। অথচ ধূমপায়ী ব্যক্তিই শুধু নন, অধূমপায়ীরাও ধূমপায়ীদের মতোই ক্ষতির শিকার হন। এই তথ্যটি অধিকাংশ মানুষ এখনো গুরুত্বের সঙ্গে নেন না।
দেশের নারী ও শিশুদের বাঁচাতে এবং ধীরে ধীরে ধূমপায়ীদের পাশাপাশি অধূমপায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের হার কমিয়ে আনতে ধূমপান সংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। তবে এজন্য পারিবারিক ক্ষেত্রে সচেতনতাও জরুরি। 

জলাধার ভরাট এবং সবুজ নিধন 
ঢাকা নিয়ে দায়িত্বশীল সংস্থার সমীক্ষা/ গবেষণা গুরুত্বের সঙ্গেই নিতে হয়। ঢাকার ৮৬% জলাধার ভরাট হয়েছে গত ২৮ বছরে; মহানগরীর সবুজ এলাকা সবচেয়ে বেশি কমেছে গত ৮ বছরে। এমন তথ্য আমাদের চমকে দেয়, উদ্বেগ বাড়ায়। শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়। সেখানেই পেলাম ওপরের দুটি তথ্য।
‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ভরাট এবং সবুজ নিধন : বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকা শহরে (নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলো ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন) সবুজ এলাকা ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৫৩ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালে তা কমে গিয়ে ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় জলাধার ও জলাভূমি ছিল ৩০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার। পরের পাঁচ বছরে ওই জলাভূমির ১১ দশমিক ৮২ বর্গকিলোমিটার ভরাট করা হয়েছে।
বিআইপির এই গবেষণা এমন সময়ে প্রকাশ করা হলো, যখন আন্দোলন করেও রাজধানীর সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুরান ঢাকার গে-ারিয়ায় শত বছরে পুরনো পুকুর ভরাটের পাঁয়তারা চলছে; হাতিরঝিলের একাংশ ভরাট করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক পরিকল্পনায় ব্যর্থতা আমাদের ভবিষ্যৎকে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত করে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার সময় জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’ ঢাকার জলাধার ও পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকাকে রক্ষা করতে না পারলে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’
শহরের বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে শহরের মোট ভূমির ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা রাখতে হয়। ঢাকা শহরে সেটি আছে মাত্র ৭ শতাংশ। ঢাকার সবুজ এলাকা কমার পেছনে পার্কগুলো কংক্রিটে আচ্ছাদিত করা, খেলার মাঠ দখল করে হাটবাজার ও ক্লাব স্থাপন করা এবং গাছ কাটাকে দায়ী করা হয়।

পুকুর রক্ষার দাবি 
আশির দশকে যখন উচ্চশিক্ষার্জনের জন্য ঢাকায় আসি, তখনো এই শহরে ছিল অন্তত দুই হাজার পুকুর! অবিশ^াস্য শোনালেও সত্যি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দখলবাজি ও মানুষের পরিবেশবিষয়ক অসচেতনতার কারণে সেসব পুকুর হারিয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও এ শহরে পুকুর ছিল ১০০টি, সেই সংখ্যা এখন ৩০টির কম। ঢাকা শহরের যে ভয়াবহ দাবদাহ, তার অন্যতম কারণও জলাশয় কমে যাওয়া। তাই এই ৩০টি পুকুরকে রক্ষা করার দায় ঢাকাবাসীর ওপরেই পড়ে। তাই নয় কি? কিন্তু পুরনো ঢাকার গে-ারিয়ায় শত বছরের পুরনো ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করা যায়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পুকুর ভরাট করছেন। আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানাধীন এ পুকুর রক্ষার আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচির আহ্বায়ক ইব্রাহীম আহম্মেদ বলেন, জলাধার ও জলাশয় আইনে পুকুর ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যাই হোক, একমাত্র রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহার ছাড়া সেই পুকুর ভরাট করা যাবে না। তাই অতিসত্বর এ পুকুর দখলমুক্ত করে এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। 

গুগলের কল্যাণে গ্রেপ্তার শিশু যৌন নিপীড়ক
নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরের ১০ বছরের কম বয়সী একাধিক শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন ২৬ বছর বয়সী ইনজামামুল ইসলাম। তিনি যৌন নিপীড়নের সেই দৃশ্যগুলো ভিডিও ধারণ করে রেখে দেন নিজের মুঠোফোনে। গুগলের কল্যাণে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। বুধবার গাজীপুরের বানিয়ারচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইনজামামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্বৃত্ত পাকড়াওয়ের ঠিক এমনই আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল বছর দুয়েক আগে ঢাকার বাইরে বরিশালে। মোবাইলে ধারণ করে রাখা শিশু যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও শনাক্ত করে গুগল। এরপর গুগলের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের বরিশালের সেই নিপীড়ককে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি পুলিশ। সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইনজামামুলকে গ্রেপ্তার করার সময় তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে অনেকের নগ্ন ছবি, ভিডিও এবং শিশু পর্নোগ্রাফির প্রচুর আধেয় (কনটেন্ট) পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধ, শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মূলসহ শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধন করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যেমন ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট তাদের নেটওয়ার্কে শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার, যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এনসিএমইসিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জানায়। ২০২১ সাল থেকে এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয় আমাদের সিআইডি। সেই সূত্রে এসংক্রান্ত তথ্য মিলছে।
বাংলাদেশে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। মাদক বেচাকেনা তেমনই একটি অপরাধ যার কারণে বড় ঝুঁকির ভেতরে আছে তরুণ সমাজ। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্তের বিষয়টি কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পথ পাওয়া যাবে এ নিয়ে কাজ শুরু করলে। 

আত্মহননের কারণ অনুসন্ধান
আরাফাত সিয়াম, তানভীর ফুয়াদ রুমি ও মুরাদ নীল, এই তিনজন পরপর আত্মহত্যা করেছেন মে মাসের যথাক্রমে ৫, ১৭, ৩০ তারিখে। এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ফেসবুকে লেখক পাপিয়া জেরীন একটি ভিন্নমত দিয়েছেন। এই মত উপেক্ষা করাই যায়, কিন্তু বিবেচনায় নিলে তো ক্ষতি নেই। বিশেষ করে তরুণ পাঠকের জন্য এটি উপকারীও হতে পারে। এমনটা ঘটছে কিনা, সে ব্যাপারে আমরা কিভাবে শতভাগ নিশ্চিত হব? তাই পাপিয়ার অভিমত থেকে খানিকটা অংশ তুলে দিলাম। তিনি লিখেছেন, ‘অনুমান করা যায় আত্মহত্যাকারীরা কোনো কাল্টের শিকার। তাদের সুইসাইড কোনো প্যাটার্ন ফলো করছে। তিনজনই পড়ুয়া এবং মৃত্যুর আগে কোনো (আলাদা আলাদা)  সিনেমা দেখে ভীষণ প্রভাবিত হচ্ছিলেন বলে সোশাল মিডিয়ায় সে তথ্য শেয়ার করেছেন। 
এই কাল্ট বিষয়ে যেসব বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন : গোপন কাল্টের মেন্টর প্রথমত আপনাকে লাইফ এবং এইম বিষয়ে হেল্প করতে এগিয়ে আসবে। এখান থেকেই শুরু। শেষ পর্যায়ে আপনার কাছে কিছু ইল্যুশনারি ড্রাগ সাপ্লাই হতে পারে, যেটা আপনার জীবন-মৃত্যু-অমরতা নিয়ে নতুন এক্সপেরিয়েন্স দেবে। মনে রাখবেন ভিকটিম যেটার অভিজ্ঞতা নিচ্ছে পুরোটাই একটা মিথ্যা।
প্রথমে আপনার জীবন সম্পর্কে ধারণা, এইম ও দক্ষতা নিয়ে নির্দেশনা, আপনার পঠনপাঠন, সিনেমার রুচি গড়িয়ে তোলা এগুলো ধীরে হিপনোটিজমের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া। অপরিচিত কোনো গ্রুপের সঙ্গে বা কোনো মেন্টরের সঙ্গে এগুলোতে অন্ধভাবে ইনভলভ হতে যাবেন না। পরিবার, আত্মীয়, নিকট বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।’ 

বুয়েট গ্রাজুয়েটস ক্লাবের উপভোগ্য আয়োজন
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রদের এখন কবি নজরুলের সাম্যবাদী ভাবনা নিয়ে ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হয়। বুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের (স্থপতিদেরও) ক্লাবে কবি নজরুল স্মরণে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান দেখার সময়ে হঠাৎ মনে এলো তথ্যটি। যদি আজকের তরুণ প্রজন্ম এই প্রামাণ্য গীতি আলেখ্যটি দেখেন, তবে নজরুলের নাটকীয়, বলা ভালো উপন্যাসোপম জীবন, এবং তার বিচিত্র সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে উপভোগ্য বিনোদনের মধ্য দিয়ে জানা-বোঝা-শেখার একটা দারুণ সুযোগ পাবেন। পরিবেশনার অভিনবত্ব ও স্মার্টনেস নিশ্চয়ই তাদের পছন্দ হবে।

বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ পেরিয়ে মহাপ্রতিভা নজরুলকে আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এরকম ভিন্ন আঙ্গিকই দরকার। গৎবাঁধা আলোচনা, দু-চারটে থিমবিবর্জিত বিচ্ছিন্ন গান ও কবিতা শোনালে বরং তারা বিকর্ষণ বোধই করবেন, নজরুলের প্রতি আগ্রহ জন্মানো তো দূরের কথা। তাই লেখক-নাট্যকার ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাকুর মজিদের পরিকল্পনা-রচনা ও নির্দেশনায় ‘শেষ হয় নাই বেলা’-কে আমি নজরুল-স্মরণে আয়োজিত বিবিধ সমকালীন পরিবেশনা থেকে অনেকটা এগিয়েই রাখব।
রীতিমতো গবেষকের কাজটিই করেছেন শাকুর মজিদ, একইসঙ্গে অনুসন্ধানী প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতারও। নজরুলের দ্রোহী ও প্রেমিকজীবন নিয়ে আকর্ষণীয় পাণ্ডলিপি রচনাই নয়, প্রাসঙ্গিক ফুটেজ সংযোজনের জন্য বিশেষজ্ঞ-এফোর্ট দিতে হয়েছে তাঁকে। শুরুতে বিদ্রোহী কবিতা থেকে পাঠ ও ‘কারার ঐ লোহ কপাট’ গানটির সম্মেলক পরিবেশনা এক নিমেষে নজরুলের বিচিত্র-বর্ণাঢ্য জীবনধারায় প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে দর্শকদের। নজরুলের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’ নিয়ে তৈরি নাট্যাংশ, নজরুল-নার্গিস সম্পর্ক নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের খ-াংশ এই নির্মাণকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।

নজরুলের কিছু প্রেমের গানের নেপথ্য গল্প এবং সে গানগুলোর আদি রেকর্ডের অংশবিশেষ শোনানো হয়েছে। মঞ্চে উপবিষ্ট চার গুণী শিল্পী একক কণ্ঠে সম্পূর্ণ গান পরিবেশন করেছেন (তাঁদের পেছনেই ছিল প্রদর্শনের জন্য বিশাল ডিজিটাল পর্দা)। শিল্পীরা হলেন শাহীন সামাদ, সুজিত মোস্তফা, শহীদ কবির পলাশ ও মাহবুবা আকন্দ। কবিতা আবৃত্তি, সঞ্চালনা ও ধারাবর্ণনায় মানসম্পন্ন পারফর্মেন্স করেছেন আব্দুল্লাহ আল আরিফ রানা ও নায়না তাবাসসুম। বলা দরকার, এরা দুজনই শাকুর মজিদের মতোই বুয়েট গ্রাজুয়েট। মিলনায়তন ভর্তি দর্শক দেড়ঘণ্টাব্যাপী এই ব্যতিক্রমী আয়োজনটি দারুন উপভোগ করেছেন, এতে সন্দেহ নেই। শেষে ক্লাবের সভাপতি প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের সরস প্রাসঙ্গিক বক্তব্যও দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। তিনি উচ্চ প্রশংসা করলেন প্রামাণ্য গীতি আলেখ্যটির।  
    
০৪ জুন, ২০২৩

[email protected]

×