ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৫ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ২২:৫৭, ৫ অক্টোবর ২০২২

চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশের পর্যটনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বাংলাদেশের পর্যটনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সারা বছরই পর্যটকরা এসব স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন। সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে হাওড়-বাঁওড়, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি সবকিছুই আমাদের আছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সমন্বয়ের অভাব। পর্যটক ধরে রাখার জন্য আধুনিক যেসব ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যটন স্পট ব্যবস্থাপনা বা পর্যটক আনার উদ্যোগ সব ক্ষেত্রে বিশ্বের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। পর্যটকরা যে কাক্সিক্ষত সেবা বা ব্যবস্থাপনা আশা করে, কোনভাবেই তার কাছাকাছিও পায় না। দেশে পর্যটন পুলিশ আছে কিন্তু পর্যটকের নিরাপত্তায় এখনও পর্যাপ্ত ঘাটতি আছে।
দেশে পর্যটনের আকর্ষণ বা পণ্যের অভাব নেই, তবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য যে উদ্যোগ বা ব্যবস্থাপনা দরকার, এর ঘাটতি রয়েছে। মাস্টার প্ল্যান এত দিনেও হয়নি। প্ল্যানের কাজ চলছে, কিন্তু কবে শেষ হবে তার ঠিক নেই। সরকার আরও কিছু কাজ করছে, কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে। তবে সেগুলোর বাস্তবায়নের গতি একেবারেই মন্থর। সরকার স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদী নানা পরিকল্পনা নেয়ার কথা বলছে। কিন্তু পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে যেসব মন্ত্রণালয় জড়িত, সেগুলোর সমন্বয় ও কাজে খুবই ধীর গতি রয়েছে। এ খাতে গবেষণার ঘাটতি প্রকট। বিদ্যমান পর্যটক ধরে রাখতে, নতুন পর্যটক আকর্ষণ করতে, পর্যটনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে, বিদেশের পর্যটক আনতে কী কী করতে হবে, কোন খাতে কী পরিমাণ মানবসম্পদ প্রয়োজন, তা জোগান দিতে কী কী উদ্যোগ প্রয়োজন, তা নিয়ে কোন গবেষণা নেই বললেই চলে। যারা পর্যটন বোঝেন, জানেন, বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। এই খাতে দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন।

কিন্তু মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য পর্যটন বোর্ড বা কর্পোরেশনের যে উদ্যোগ, তা দৃশ্যমান নয়। পর্যটনের সঙ্গে হোটেল-মোটেল, ট্যুর গাইড মিলে আরও শতাধিক উপখাত রয়েছে। সেগুলোরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খাতে লোকবল থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। খাত-উপখাত মিলে পর্যটনের জন্য কোন টেকসই পরিকল্পনা বা ব্যবস্থাপনা নেয়া হয়নি।
কমিউনিটি-বেডজ ট্যুরিজম বা এ্যাগ্রো-বেজড ট্যুরিজমের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলোর কোন উন্নয়ন বা পর্যটকের জন্য আকর্ষণীয় সব সুবিধা পাওয়া যাবে, তেমনটি এখনও হয়নি। সেগুলোর যে অবকাঠামো বা সেবা তা দেশীয় পর্যটকের জন্যই পর্যাপ্ত নয়, বিদেশী পর্যটক তো অনেক দূরে। এগুলোর উন্নয়নের কোন পদক্ষেপও চোখে পড়ে না। দেশে দেড় হাজারের বেশি পর্যটন স্পট রয়েছে। এগুলোর কিছু অংশকে যদি পর্যটকবান্ধব করা যায় তবে পর্যটনের চেহারাই বদলে যাবে।

কোন স্থানকে পর্যটকবান্ধব করতে গেলে যে মৌলিক বিষয়গুলো প্রয়োজন, তার মধ্যে যোগাযোগ অবকাঠামো, নিরাপত্তা, রাত যাপনের জন্য মানসম্মত আবাসিক হোটেল, খাওয়ার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারসহ বিশ্রামের ব্যবস্থা, এগুলো থাকতে হবে। ঘুরতে গিয়ে যদি স্বস্তিই না মেলে তাহলে মানুষ সেখানে যাবে কেন! পর্যটনের ব্যবস্থাপনা দেশী পর্যটকের জন্যই উপযুক্ত নয়, বিদেশী পর্যটকের জন্য তো আরও অনেক কিছু প্রয়োজন। তাদের চাহিদা উপযোগী সেবা কোথায়?

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×