ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রত্যেক জাতির জীবনে এমন কিছু অবিসংবাদিত ঘটনা রয়েছে যা স্বমহিমায় দীপ্যমান। মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য রক্ত দিতে হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে। মাতৃভাষাকে ভালবেসে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে দেশপ্রেমিক সন্তানরা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিশ্বসভায় বাঙালীই প্রথম দেখাল এ অর্জনের পথ। শহীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিবিস্মৃতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী। মা বলে ডাকার অধিকার আদায় করতে বুকের তাজা রক্ত ঝরাতে হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। আমরা পেয়েছি প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশ। লড়াই করে অর্জন করেছি স্বাধীনতা। বাঙালীই প্রথম দেখাল এ অর্জনের পথ। মহান ভাষা আন্দোলনে যে অবদান বাঙালী জাতি রেখেছিল তা আজ সমগ্র বিশ্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। এ যেন আমাদের গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সময়। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক ও অভিন্ন। ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির গণচেতনার সর্বপ্রথম বহির্প্রকাশ এবং স্বাধিকার আন্দোলনের এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ৫২-এর ভাষা আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়েও রয়েছে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল অপরিহার্য এক ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের অধিকার আদায়ে যে বলিষ্ঠ সংগ্রামের সূচনা হয় তা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন থেকেই। একই সুতোয় বাঁধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালী জাতীয়তাবাদ বিকাশের সূতিকাগার। পাকিস্তানের সংকীর্ণমনা শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে দাফতরিক ও জ্ঞানচর্চার কাজকর্মে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করে। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা শিক্ষক ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক কাজী মোতাহার হোসেন, ড. পৃথ¦ীশ চক্রবর্তী, মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আবুল কাশেম, নুরুল হক ভূঁইয়া, অজিত গুহসহ অনেকে। পরে এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে নেতৃত্বে থাকেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দ। শুরু থেকেই আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। খবর ঢাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এ দেশের ছাত্র-জনতা। মুসলিম লীগ সরকারের এই হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রহণ করেন অগ্রণী ভূমিকা। ২ মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এক বৈঠক হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে। এই বৈঠকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটো দেশ স্বাধীন হয়। পাকিস্তানও দুটি অংশে বিভক্ত ছিলÑ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভূখ-ের মাঝে দূরত্ব প্রায় ১২০০ মাইল। তদুপরি বাংলার মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জন্মের ছয় মাস যেতে না যেতেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এটাই প্রথম বিক্ষোভ মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। ছাত্ররা তখন জিন্নাহর ছবি সরিয়ে ফেলে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। মাতৃভাষা, মায়ের ভাষার মর্যাদার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য আন্দোলন চলতে থাকে দেশজুড়ে। ভাষাগত বিরোধসহ পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি নানাভাবে বৈষম্যমূলক নীতি আরোপ করায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই ভাষা আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ খবর ঢাকায় পৌঁছালে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আর এটিই ছিল রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রথম সভা। এরপর ২ মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১১ মার্চ ১৯৪৮ বাংলা ভাষার দাবিতে ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দিন ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই ঘোষণার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ধর্মঘট পালন করে। ধর্মঘটের পাশাপাশি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রচারপত্র বিলি করে। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গণপরিষদের সদস্যদের জানান দেয়া হয় যে, যতদিন বাংলা ভাষা পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয় ততদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরজুড়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ছাত্র ধর্মঘট, সভা ও মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে। রাষ্ট্রভাষার দাবিকে আন্দোলনে রূপ দিতে এ সময় এগিয়ে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়কে ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগী হোন। তাঁর প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়, যেখানে উপস্থিত থাকে তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রতিনিধিও। আহ্বায়ক হিসেবে থাকেন শামসুল আলম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ১১ মার্চকে বাংলা ভাষা দাবি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১১ মার্চের কর্মসূচীকে কিভাবে সফল করা যায় সে উদ্দেশ্যে ফজলুল হক মুসলিম হলে আগের দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এক সভায় মিলিত হয়। ওই সভায় বঙ্গবন্ধু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ১১ মার্চ রাজপথে নামার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথে বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং শুরু হয় এবং সাধারণ ধর্মঘট চলতে থাকে। পুলিশ কিছুসংখ্যক ছাত্রকে ধরে নিয়ে গাড়িতে করে বহু দূরে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দেয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথমপর্বের বন্দীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জীবনের প্রথম কারাবরণ ১১-১৫ মার্চ পর্যন্ত পাঁচদিন কারাগারে কাটাতে হয়। বঙ্গবন্ধু, শামসুল হক ও বন্দীদের আরও অনেককে কারাগারের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। কারাপ্রাচীর সংলগ্ন বাইরেই ছিল মুসলিম গার্লস হাইস্কুল। স্কুলের ছাত্রীরা প্রতিদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে স্লোগান দিত। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু লেখেনÑ ‘যে পাঁচদিন আমরা জেলে ছিলাম, সকাল ১০টায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর ৪টায় শেষ করত। ছোট ছোট মেয়েরা একটুও ক্লান্ত হতো না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘বন্দী ভাইদের মুক্তি চাই’, ‘পুলিশী জুলুম চলবে না’ নানা ধরনের স্লোগান। এ সময় শামসুল হককে আমি বললাম, ‘হক সাহেব ওই দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না। হক সাহেব আমাকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ মুজিব’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ৯৩-৯৫)। ভাষা আন্দোলন রুখে দিতে সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি সকল ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। তবুও থেমে যায়নি সেই সংগ্রাম। ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করেই জন্ম হয় ভাষা শহীদ দিবসের। পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং শফিউর ছাড়াও আরও অনেকে শহীদ হয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ধর্মঘটের সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অনেক ছাত্র আহত হন এবং অনেকে গ্রেফতার হন। তবুও এই হত্যাকা- মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে পারেনি। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এভাবেই ভাষা শহীদরা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করে। জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এবং ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হবে’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলমান। ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে টঘঊঝঈঙ কর্তৃক বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি বিশ্বদরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে অমর একুশের উদ্্যাপন নিঃসন্দেহে এক বিশাল জাতীয় গৌরব ও সম্মানের। ২০০০ সাল থেকে টঘঊঝঈঙ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন করেছিলেন ভাষার চেতনাকে বুকে ধারণ করে। তাঁর চিন্তা-চেতনায় ছিল মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতি বিধানের দৃঢ় সংকল্প। বাঙালীদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিয়ত সংগ্রামে এ চেতনা ছিল সর্বদা জাগ্রত। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপোসহীন, কঠোর ও একাট্টা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ এই কালখ-ে সংগঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই গোটা সময়েই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, কখনও মুক্ত থেকে অথবা কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায়। বাংলা ভাষাকে রষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য যে সংগ্রাম সূচিত হয়, সঙ্গে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সুগভীর সম্পর্ক। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীরা এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সময়ের আবর্তে শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে পালন করছে সারাবিশ্ব। যার গৌরব শুধুই বাঙালী জাতির। ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে প্রতিবছর মহান ভাষার মাসের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গ্রহণ করা হয় পদযাত্রাসহ নানামুখী আয়োজন। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নানাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ভাষাসৈনিকদের প্রতি। ভাষা আন্দোলনের সুগভীর প্রভাব বাংলার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিটা পর্যায়ে প্রত্যক্ষ করা যায়। যার সার্থক ফসল বর্তমানের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×