আদিম মানুষ কথা বলতে পারত না। কেবল ধ্বনি, মুখমন্ডল ও হাত-পায়ের সাহায্যে পারস্পরিক ভাববিনিময় করত। যারা ছিল মূক ও বধির তারা তাও পারত না। তাদের সম্বল ছিল চোখ ও হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে নিজেদের মধ্যে বোঝাপাড়া বিনিময়। এসবই যে সহজসাধ্য ছিল এমন বলা যাবে না। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রথমে মুখের ধ্বনিকে ভাষা তথা শব্দে রূপান্তর এবং পরবর্তীতে মৃৎফলক বা গাছের বাকলে এর রূপ দিতে সমর্থ হলো সঙ্কেত ও লিপির মাধ্যমে। প্রথমে সেসব ছিল নিছক সঙ্কেত বা সাঙ্কেতিক পর্যায়ে। কালক্রমে যা পর্যবসিত ও পরিণত হয়েছে মুখের ভাষা এবং লিখন পদ্ধতিতে। আর যারা মুখে কথা বলতে পারে না, শুনতে পারে না কানে, তাদের জন্য তৈরি হতে থাকল ইশারা ভাষা। মুখমন্ডল এবং দু’হাতের দশ আঙ্গুলের মাধ্যমে ভাববিনিময় ও কথা চালাচালি। নিয়মিত ভাষাচর্চা শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে তৈরি হলো পাঠ্যপুস্তক, মুদ্রণযন্ত্র ইত্যাদি। সমাজে বাক-প্রতিবন্ধী ও বধিররাই বসে থাকবে কেন? তাদের জন্য তৈরি হলো ইশারা ভাষার লিখন পদ্ধতি, যা সমধিক প্রচলিত ব্রেইল পদ্ধতি হিসেবে। বলাবাহুল্য, এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।
সরকার এবার দেশের অগণিত মূক ও বধির প্রতিবন্ধীদের জন্য ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সভায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেশ ও জাতির ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা। উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধীদের জন্য দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করেছেন সমঅধিকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে আন্তরিক ও অঙ্গীকারাবদ্ধ। সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে ইশারা ভাষার মাধ্যমে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার সময়ের দাবি। যা কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে ইতোমধ্যে। ব্রেইল পদ্ধতিতে কিছু পাঠ্যপুস্তকসহ সৃজনশীল বইও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলায় ইশারা ভাষায় একটি প্রমিত অভিধান প্রণয়নও জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশে একটি ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলে এসব কাজ এগিয়ে নেয়া সহজে সম্ভব হবে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের নিমিত্তে। উল্লেখ্য, সরকার ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। যেখানে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।