ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৬ এপ্রিল ২০২০

বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা

করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ডব্লিউএফপি) বলছে, অন্তত ৩৬টি দেশ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকা, দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা, যদি না সময়োচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তীব্র খাদ্য সঙ্কটে থাকা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। করোনার কারণে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে ২৬ কোটিতে। হুমকির মুখে পড়বে অন্তত ৬ কোটি শিশু। খাদ্য সঙ্কটের পেছনে করোনার বাইরেও রয়েছে সিরিয়া-ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। তদুপরি মহামারীতে পর্যটন খাত থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া, রেমিটেন্সে ধস, আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্যসহ সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার বন্ধসহ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বহু দেশ ও মানুষের জীবন-জীবিকা পড়েছে হুমকির মুখে। সর্বশেষ, তেলের বাজারেও নেমেছে ধস। এই সমূহ হুমকি মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছে ডব্লিউএফপি এবং তা অত্যন্ত জরুরীভিত্তিতে। সংস্থাটি বলেছে চলতি বছর বৈশ্বিক সাহায্য কর্মসূচীগুলো অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন ১০-১২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ এদিক থেকে রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থানে। দেশ বর্তমানে খাদ্য বিশেষ করে ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। তদুপরি চলতি বোরো ফসল উত্তোলন শুরু হয়েছে দেশব্যাপী। ফলনও অত্যন্ত ভাল। খাদ্য মজুদের লক্ষ্যে সরকার এবার ২১ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে। গত বছর কেনা হয়েছিল ১৬ লাখ টন। ফলে দেশে খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। গত কয়েক বছর ধরে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমের ফলনও ভাল। মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে যে, সুবিস্তৃত হাওড় অঞ্চল, আড়িয়ল ও চলন বিলে বোরোর উৎপাদন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সেই অনুপাতে ধান কাটার লোক কম। অনেকেই লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রধানমন্ত্রী তাদের ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ সহায়তা করতে বলেছেন। ছাত্রদেরও ধান কাটার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ধান কাটার যন্ত্রও দেয়া হয়েছে। আগামী আউশ মৌসুমের জন্য কৃষকদের সহায়তা প্রদানে বিনামূল্যে বীজ সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যে ঋণ সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। যার সুফল পাবেন কৃষক থেকে শুরু করে খামারি ও পোল্ট্রি খাত, ফুল-ফল চাষীসহ সংশ্লিষ্টরা। খাদ্য মজুদ আরও বাড়ানোর জন্য এবার ধান ক্রয়ের সীমাও বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ছাড়াও সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এই চাল বিতরণের জন্য বর্তমানের ৫০ লাখ ওএমএসের কার্ডের অতিরিক্ত আরও ৫০ লাখ কার্ড দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি কার্ড থেকে সুবিধা পাবে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এ ছাড়া প্রতি জেলা পর্যায়ে নগদ ৫০ কোটি টাকা ও ৯০ হাজার টন খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি চলতি মহামারীকবলিত দুর্যোগ পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে তিন বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা। সরকারের এই স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন অবশ্যই।
×