ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর: প্রত্যাহার করা হয়েছে শিক্ষা সচিবকে

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৫, ২২ জুলাই ২০২৫

সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর: প্রত্যাহার করা হয়েছে শিক্ষা সচিবকে

শোকের মধ্যেও আজ দুপুরে রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় ঘটে যায় এক নজিরবিহীন ঘটনা। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিতাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার প্রতিবাদে সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের ছয় দফা দাবির অন্যতম ছিল শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের অপসারণ।

বিক্ষোভের সূত্রপাত ও দাবিগুলো

দুপুর দেড়টা থেকে সচিবালয়ের প্রধান গেটের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, চলমান এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত রাত তিনটা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, যা শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বহীন আচরণ। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “উনি রাত তিনটার সময় কিভাবে পরীক্ষার নির্দেশনা স্থগিত করেন? উনি কতটা রেসপন্সিবল?” অন্য একজন প্রশ্ন তোলেন, “আমাদের শিক্ষকদের উপর হামলা হয়েছে, সরকার কি এর দায় নেবে না?”

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের পরিবর্তে বরং শিক্ষার্থীদের উপর জুলুম চালানো হচ্ছে। তারা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে।

ভাঙচুর, লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষ

সচিবালয়ের পাঁচটি গেট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বন্ধ করে রাখলেও শিক্ষার্থীরা পৌনে চারটার দিকে গেটের বাধা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর শুরু হয় ভাঙচুর, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভেঙে ফেলে তারা এবং এগিয়ে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকেও।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে ছুটোছুটি শুরু করেন। সংঘর্ষে আহত হন শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সচিবালয় থেকে বিতাড়ন ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

পুলিশ পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের সচিবালয় এলাকা থেকে বের করে দেয়। তবে বাইরে এসেও তারা আবার সংগঠিত হয় এবং প্রেস ক্লাব, শিক্ষাভবন ও গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এ সময় কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিজিবি-কোস্টগার্ড মোতায়েন, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। তাদের মাধ্যমে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সচিবালয় একটি সংরক্ষিত এলাকা যেখানে মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ অথচ তা লঙ্ঘন করে ভেতরে ঢুকে পড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলছে, এসব আন্দোলনকারী প্রকৃত ছাত্র ছিলেন না।

শিক্ষা সচিব প্রত্যাহার

বিক্ষোভের মুখে অবশেষে সরকার শিক্ষা সচিব সিদ্দিকী জুবায়েরকে প্রত্যাহার করে। এ তথ্য শিক্ষা উপদেষ্টার ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরিস্থিতি এখনও থমথমে রয়েছে সচিবালয় ও আশপাশের এলাকায়।

Jahan

×