
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়
দ্বিতীয় দফার সংলাপে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (্এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে ঐকমত্য হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এনসিসি গঠনের প্রস্তাবের পক্ষে মতামত দিলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের দল চায় না এনসিসি গঠন করা হোক। কারণ এতে নির্বাহী শাখার কর্তৃত্ব ক্ষুণœ হবে।
বুধবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংস্কার আলোচনায় এনসিসি গঠনের প্রস্তাব প্রাধান্য পেলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থেকেই গেছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত না হলেও বুধবারের বৈঠকে যোগ দিয়ে জামায়াতে ইসলামী লন্ডনে দেওয়া যৌথ বিবৃতিকে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে উল্লেখ করে। আর কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগে বৈঠক থেকে কিছু সময়ের জন্য প্রতীকী ওয়াকআউট করেছে সিপিবি-গণফোরামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বুধবারের বৈঠকে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে দিনভর ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়। আজ বৃহস্পতিবার পুণরায় দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের মতো বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ তদারকি করতে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে এনসিসি। এর লক্ষ্য, নির্বাহী বিভাগের একতরফা কর্তৃত্ব সীমিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
এ বিষয়ে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তার দল চায় না এনসিসি গঠন করা হোক। কারণ, এর মাধ্যমে নির্বাহী শাখার কর্তৃত্ব ক্ষুণœ হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কারে বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার দিকে জোর দেওয়া উচিত। তিনি পরামর্শ দেন, নতুন সংস্থা তৈরির পরিবর্তে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে বর্তমান সার্চ কমিটি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করা যেতে পারে।
এর জবাবে এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ অভিযোগ করেন, বিএনপি তাদের অবস্থান বদলে ফেলছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজে আওয়ামী লীগের আইনের সমালোচনা করেছিলেন নির্বাচন কমিশন সদস্যদের নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য। এখন বিএনপি ক্ষমতায় আসার পথ দেখছে বলে নিজেদের সুবিধার জন্য সেই কথা ভুলে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি, কিভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নখদন্তহীন বাঘে পরিণত করা হয়েছিল। বিএনপি-এনসিসির বিরোধিতা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর বিকল্প প্রস্তাব দেয় নি।
মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত না হলেও বুধবারের বৈঠকে যোগ দিয়ে এনসিসি গঠনে নিজেদের সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে, এই কাউন্সিল থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এবি পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, এনসিসি গঠনে সমর্থন দেওয়া একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা। আমরা যদি এনসিসির মতো জবাবদিহি ব্যবস্থা তৈরি না করি, তা হলে গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। বর্তমানে পুরো সাংবিধানিক নিয়োগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য হাজারও তরুণ জীবন দিয়েছে। আমরা এটা নষ্ট হতে দিতে পারি না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য এনসিসির মতো তদারকি সংস্থার বিষয়ে একমত হওয়া অপরিহার্য। এটি নতুন কিছু নয় অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এমন কাউন্সিল আছে। অন্তত নির্বাচন কমিশন, দুদক ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ এনসিসির মতো কাঠামোর মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করার জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এটাই এনসিসি গঠনের উদ্দেশ্য। আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করার সুযোগ রয়েছে, যেখানে ক্ষমতাসীনরা নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের মধ্যে থাকবে।
পারস্পরিক অবস্থান সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে- আলী রীয়াজ ॥ তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে ব্রিফিংকালে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সম্মতি রয়েছে উল্লেখ করে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা-এই দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক দলগুলো অনুভব করে। দু’একটি দলের মধ্যে এ ব্যাপারে নীতিগত মতপার্থক্য থাকলেও একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থার বিষয়ে সকলে মত দিয়েছেন।
আলী রীয়াজ আরও জানান, সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ নামটি নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুললেও মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য নাম পরিবর্তনকে বড় বিষয় হিসেবে দেখছেন না কমিশন। আমরা বলেছি, কাঠামো ও কার্যকারিতা মুখ্য, নাম নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি করার প্রয়োজন নেই। আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে এবং এটি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের কাছে দুটি প্রস্তাব এসেছে। একটি হলো ইলেক্টোরাল পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং অন্যটি বিদ্যমান বিধান সংস্কার করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা পুনর্বিন্যাস। সবাই এই বিষয়ে একমত হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন যৌথভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী আলোচনায় তুলে ধরবে।
সংলাপে দুইটি রাজনৈতিক দলের ওয়াকআউট প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এতগুলো দলের মধ্যে মতপার্থক্য ও ক্ষোভ থাকবেই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংলাপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দল সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়েছে। আলোচনা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং গঠনমূলক।’ তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও অন্য অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা চলবে।
এনসিসি গঠনের সঙ্গে বিএনপি একমত নয়-সালাহউদ্দিন ॥ বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন হলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমে যাবে, যাতে ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে মনে করে বিএনপি। যে কারণে বিএনপি এনসিসি ধারণার সঙ্গে একমত নয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি সাংবিধানিক কাউন্সিলর প্রস্তাব করেছে কমিশন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল কর্তৃক ডেপুটি স্পিকারের নিয়ে এনসিসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এ ধারণার সঙ্গে একমত না। কারণ এনসিসিকে সাংবিধানিকভাবে অনেক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এনসিসির জবাবদিহি নেই দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, যদি অথরিটি থাকে, পাওয়ার ফাংশন থাকে কিন্তু অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকে না। সেই রকম কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা গণতান্ত্রিক পার্টি হিসেবে সমর্থন জানাতে পারি না। এ ফাংশনগুলা আলাদা করে আরেকটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার মধ্য দিয়ে একটা ইমব্যালেন্স সৃষ্টি করা হবে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, রাষ্ট্রের মধ্যে একটি ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্রকাঠামো, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেটা করার জন্য কি করতে পারি সেটা আমাদের চিন্তা করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে অতীতের নির্বাচনগুলো এভাবে হত না। হয়ত কিছুটা আপত্তি থাকত, কিছু ভুলত্রুটি হত। তাহলে আমাদের কেয়ারটেকার সরকারকে পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অলরেডি হয়েছে। যদি আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রকৃতভাবে স্বাধীনভাবে, আইনিভাবে ফাংশন করতে দিই, তাহলে এ দুইটা বিষয়ের মধ্য দিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ সম্পূর্ণভাবে স্বৈরাচার হওয়া থেকে চিরতরে বিদায় নেবে।
এনসিসি নিয়ে পূর্ণ মূল্যায়ন করবেন কি না-এ প্রশ্নের তিনি বলেন, বিকল্প কোনো প্রস্তাব যদি আসে, সেটা আমরা দলের মধ্যে আলোচনা করব। সেটা নিয়ে আমাদের আবার চিন্তা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি বিদ্যমান ব্যবস্থাতেই জাতীয় সংসদের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করবেন।
লন্ডনে যৌথ বিবৃতি নজিরবিহীন-জামায়াতের নায়েবে আমীর ॥ তৃতীয় দিনের সংলাপে মধ্যাহ্নের বিরতিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতে একটি দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে সরকার প্রধানের এমন বৈঠক পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এতে আমরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিব্রত। এ কারণেই ঐকমত্য কমিশনের গতকালের (মঙ্গলবার) বৈঠকে আমরা অংশগ্রহণ করিনি। তবে প্রধান উপদেষ্টাসহ কমিশনের অনুরোধে আজকে (বুধবার) এসেছি। এ দিকে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।
যৌথ বিবৃতি নিয়ে জামায়াতের আপত্তি প্রসঙ্গে দলটির নায়েবে আমীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনী ডেটলাইনের কথা বলেছেন। এটি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। লন্ডনে বৈঠকের বিষয়েও কোনো প্রশ্ন নেই। তবে যৌথ বিবৃতি নিয়ে শুধু জামায়াত নয় অনেক দলই বিব্রত। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে এসে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে ভালো হতো।
মঙ্গলবারের বৈঠকে না আসার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা না আসার কারণ সাংবাদিকরা বের করতেন পারেন নি। তবে মূল কারণ যৌথ বিবৃতি। আপনারা জানেন লন্ডনে বৈঠকের আগের দিন আমরা স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে, তখন নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।
আমরা মনে করেছি, বিষয়টি সঠিক হয়নি। তাই প্রাথমিক প্রতিবাদ হিসেবেই গতকালের অনুপস্থিতি। তবে রাতে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামীর আমিরকে ফোন দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন আজকের (বুধবার) বৈঠকে অংশ নিতে। তাই অংশ নিয়েছি। আশা করি সামনের সব বৈঠকে থাকব।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড কি আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হয়তো এখনও বোঝেন নি। কারণ যিনি এক মাসে একটি ভবনের তালা খুলতে পারেননি, তিনি নির্বাচনের সময় কি করতে পারবেন তা জানা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রথমত সাংবিধানিক কাউন্সিলের পক্ষে জামায়াত। তবে এর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সম্পৃক্ততা চাই না। কারণ তাঁরা দুই জনই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকেন। তা ছাড়াও কোনো বিষয়ে বিরোধ হলে সমাধান করবেন কে? তাই সেখানে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ও স্পিকার থাকবেন।
বিরোধীতাকারীদের বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে- এনসিপির নাহিদ ॥ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে কিছু দল পক্ষে আর কিছু দল বিপক্ষে। তবে যারা বিপক্ষে রয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে। এনসিসি গঠন না হলে গণঅভ্যুত্থান ও সংস্কার কমিশন ব্যর্থ হবে।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এনসিসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে মত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল এনসিসি গঠনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। আমরা মনে করি যারা এনসিসি গঠনের বিপক্ষে, তারা মূলত একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামোর মধ্যেই থেকে যেতে চান।
তিনি জানান, এনসিপি শুরু থেকেই এনসিসি গঠনের প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। তবে গঠনের কাঠামো ও প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু গঠনমূলক মতভেদ রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে এনসিসির বাইরে রাখার পক্ষে মত দেন তিনি। আবার, এনসিসির অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিয়োগের ক্ষমতা না রাখার পক্ষেও তিনি অবস্থান নেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাহী বিভাগের অসম ক্ষমতা হ্রাস করতেই আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। এনসিসি গঠন হবে সেই ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তিনি আরও বলেন, এনসিসি গঠনের বিরোধিতাকারী দলগুলোকে কেবল না বলার চেয়ে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।
যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, তারা সংস্কার চায় না- মঞ্জু ॥ আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, যারা ক্ষমতায় যেতে চান, তারা সংস্কার চান না। বিশেষ করে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি কমিশনের নিয়োগ তারা আগের মতো নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখতে চান। আমরা মনে করি, এ পদ্ধতিতে নিয়োগের কারণে অনেক সময় দলীয় ও আঞ্চলিকতা কাজ করে। এতে সঠিক ব্যক্তি বাছাই করা হয় না।
তিনি বলেন, বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন, দুদক, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের নিয়োগগুলো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়োগ হয়। লাখো তরুণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পটপরিবর্তনে এমনটি চললে তাদের স্বপ্ন বৃথা যাবে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এনসিসি গঠনে একমত। আমরাও এর পক্ষে। এটি দুই প্রক্রিয়ায় হতে পারে। সংসদ থাকলে একভাবে। আর সংসদের বাইরে অন্যভাবে। সেটিও আলোচনা সাপেক্ষ। তবে এবি পার্টি এতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে চায় না। অবশ্য এতেও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত হলে আমাদের আপত্তি নেই।
দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের প্রয়োজন নেই–প্রিন্স ॥ বাংলাদেশের ‘বাস্তবতায়’ দ্বিক্ষক পার্লামেন্টের কোনো প্রয়োজন নেই বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ এবং বামপন্থিরা স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশের বাস্তবতায় দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের প্রয়োজন নাই।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চকক্ষ গঠনের এক জায়গায় লেখা আছে, দুই কক্ষের সংসদ প্রতিষ্ঠা। আমরা দেখার পর ঐকমত্য কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললাম, কিসের ভিত্তিতে এটা লিখলেন? তারা কমিশনের সঙ্গে আগের বৈঠকেও দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের বিরোধিতার কথা বলেছিলেন। সেই বিরোধিতা করার বিষয়টি মঙ্গলবারের বৈঠকেও তুলে ধরা হয়। তখন ওনারা স্বীকার করেছেন যে, এই লেখাটা যথাযথ হয় নাই। তার মানে আমাদের বক্তব্যটা বুঝেছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের বাস্তবতায় যে ব্যবস্থা আছে, ওটাকে উন্নত করা, অন্য কাজ আমরা করব।’
সংস্কারে একমত না হলে গণভোটে যেতে হবে- গাজী আতাউর ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে, প্রয়োজনে গণভোটে যেতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল যারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ও শক্তিশালীকরণের কথা বলতেন এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা বলতেন, তারাও আজকে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। কেউ কেউ বলতে চাইছেন, এটা এখন গঠন না করে পরে গঠন করা যেতে পারে। বিষয়টি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে।
বৈঠক থেকে ওয়াকআউট ॥ কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে বের হয়ে আসেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। বুধবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক চলাকালে তারা বেরিয়ে আসেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম। অবশ্য পরে ঐকমত্য কমিশনের দু’জন সদস্য এসে অনুরোধ করলে তাঁরা আবার বৈঠকে ফিরে যান।
অভিযোগের বিষয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বৈঠকে বৈষম্য হয়েছে। জামায়াতের তিনজন বলেছে, আমাদের একজন বললেও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মিজানুর রহমান এবং শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ আমরা প্রতিবাদ করেছি। ঐকমত্য কমিশন এটা নোট করেছে, তাই আমরা যাচ্ছি।