ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

ওষুধ খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় শ্রীলঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৯ জুন ২০২৫

ওষুধ খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় শ্রীলঙ্কা

ওষুধ খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় শ্রীলঙ্কা

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ওষুধ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে শ্রীলংকা-বাংলাদেশ বিজনেস কো-অপারেশন কাউন্সিলের সভাপতি আন্দ্রে ফার্নান্দো এ আহ্বান জানান।
শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ প্লেনারি সেশন হয়। দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় এর আয়োজন করে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কা।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কার সভাপতি আনূরা ওয়ারনাকুলাসুরিয়া বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরি। দু’দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
এ সময় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও হাল্কা প্রকৌশল এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাত এ অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি জানান, শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, জ্বালানি, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে ৪৩৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে প্রায় তিন দশক আগে সই হওয়া ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ যুগোপযোগী করার ওপর জোর দেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মানগালা ওয়াইজেসিঙ্গহি জানান, শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে মোট রপ্তানি ছিল ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শ্রীলঙ্কা তার রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর অধিক হারে প্রাধান্য দিচ্ছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, তৈরি পোশাক, ফেব্রিক্স এবং কেমিক্যাল প্রভৃতি পণ্য আমদানি করেছে। এ ছাড়াও সুতা ও টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, মসলা, পশু খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাদাম ও কৃষিপণ্য প্রভৃতি খাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। শ্রীলঙ্কার ওষুধ, প্যাকেজিং, লজিস্টিক ও রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অব শ্রীলঙ্কার রেনুকা এম ওয়াইরাকুনে বলেন, দু’দেশের মধ্যকার এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও নিরসন হবে। শ্রীলঙ্কায় ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং ফেব্রিক্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন। একই সঙ্গে অবকাঠামো, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি এবং শিক্ষা প্রভৃতি খাত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সব সেবা সম্বলিত ১৫টি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালনা করছে। যেখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোদি বক্তব্য দেন।
আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অতিদ্রুত এফটিএ স্বাক্ষর জরুরি।
এ সময় ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরে দু’দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়াও উভয় দেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দু’দেশের শুল্ক-বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পাশাপাশি নীতির যুগোপযোগী সংস্কারের ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ৭০টি শ্রীলঙ্কান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির ১৫০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দু’দেশের উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান। যা ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সালিম সোলায়মান ও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যোগ দেন।

×