
ছবি: জনকণ্ঠ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা কোনো দলের বা প্রতীকের দাস নই, আমরা স্বাধীন নাগরিক। আমাদের প্রয়োজন এমন জনপ্রতিনিধি, যারা শুধু ভোটের সময় নয়, পুরো সময়জুড়ে জনগণের পাশে থাকেন। যে নেতা মানুষের কথা বলেন, জনকল্যাণে কাজ করেন—তিনি যেই দলেরই হোন না কেন, তাকেই আমাদের সমর্থন দেওয়া উচিত। এমন যোগ্য নেতাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।’
শুক্রবার (৩০ মে) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে সুন্দরগঞ্জ পৌরশহরের স্বাধীনতা চত্বরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন 'আমরা দেখেছি, বাবা নেতা, এরপর ছেলে, তারপর নাতিও নেতা! প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে চোখ বুজে ভোট পড়ে যাচ্ছে। এই অন্ধ আনুগত্যই পরিবারতন্ত্রের এক বিপজ্জনক রূপ। এখনই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। ভেবে দেখতে হবে—যাকে আমরা ভোট দিচ্ছি, তিনি কি সত্যিই যোগ্য? তিনি কি মানুষের কথা বলেন? জনগণের পাশে দাঁড়ান? যদি দাঁড়ান—তাহলে তিনি যেই দলেরই হোন না কেন, তাকেই আমাদের সমর্থন করা উচিত, তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে ছাত্রজনতার নেতৃত্বে দেশে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, তার রাজনৈতিক রূপদানের সাহসিক দায়িত্ব নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এনসিপি গঠনের পর আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম—সুন্দরগঞ্জে আসব। আজ রাত পৌনে ১টা—আমরা এসেছি, কথা রেখেছি। এখানে এসে আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আমাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা আরও হাজারগুন বেড়েছে। সুন্দরগঞ্জ উত্তরাঞ্চলের এক অবহেলিত জনপদ—নদীভাঙন, চিকিৎসাহীনতা, বেকারত্বসহ নানা সংকটে বছরের পর বছর ধরে এখানকার মানুষ বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে। কিন্তু আজকের এই উপস্থিতি বলে দিচ্ছে, মানুষ আর পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে না, পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের দল—কোনো গোষ্ঠী বা পরিবারের নয়। আমরা আছি পরিবর্তনের পক্ষে, মানবিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে। সুন্দরগঞ্জ থেকেই সেই পরিবর্তনের সূচনা হোক—এই আমাদের প্রত্যাশা।’
সারজিস আলম বলেন, ‘গাইবান্ধায় ছয় শহীদ পরিবার আছে, যারা গণআন্দোলনের পক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কেউ আজও শরীরে গুলির চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন, কেউ সন্তানের শোক বুকে ধারণ করে ন্যায়বিচার চান। এই শহীদরাই আমাদের আন্দোলনের শক্তি, তাদের ত্যাগকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।’
এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম আরও বলেন, ‘এখন দায়িত্ব আপনাদের। এই উপজেলা, এই জেলা আপনাদের। দালাল, দুর্নীতিবাজ, মাদকাসক্ত, চাঁদাবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের যেন আর নেতৃত্বে না আনেন। যারা সেবার নামে শোষণ করে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সুন্দরগঞ্জসহ গাইবান্ধার যেকোনো সরকারি অফিস, আদালত বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যারা জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্বে আছেন, তারা যদি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করেন—যদি ঘুষ নেন বা হয়রানি করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা এমন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চাই না যেখানে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই—আছে শুধু দালাল আর হয়রানি।'
জুলাই যোদ্ধা আশানুর রহমানের সভাপতিত্বে এসময় পথসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এ্যাড. আলী নাসের খান, ডা. মাহমুদা মিতু, আসাদুল্লাহ গালিব, সাদিয়া ফারজানা দিনা, কেন্দ্রীয় সংগঠক নাজমুল হাসান সোহাগ, কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস, উপজেলা সংগঠক আজিজুর রহমান, লুৎফর বকসি প্রমুখ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধা জেলার শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক নুর আলম মিয়া নুর প্রমুখ।
আবির