
ছবি: জনকণ্ঠ
মানিকগঞ্জের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজিবপুর এলাকা। ছোট্ট এক কামারের দোকান। এক পাশে জ্বলছে আগুন, তাপে লাল হয়ে উঠেছে লোহার ছুরি। মাঝবয়সী এক কামার ঘাম ঝরিয়ে সেটি পেটাচ্ছেন নিরন্তর। চারপাশে হাতুড়ির টুংটাং শব্দ। চোখে-মুখে ক্লান্তি, তবুও থেমে নেই হাতের কাজ।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে এমনই দৃশ্য মানিকগঞ্জের কামারপাড়ায়। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের নানা সরঞ্জাম তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কামাররা।
“সারা বছর কাজ থাকে না। ঈদের আগে এই সময়টাতেই মূল আয় হয়,” বলেন কামার আম্মু কামার, মানিকগঞ্জ সদরের বারাহীর নতুন বাজারের একজন পুরোনো কামার। আগুনের তাপে কপাল থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছিল তাঁর। তবুও হাত থামাননি।
গোপাল নামে আরেকজন কামার জানান, “আগে মানুষ হাতে তৈরি জিনিসেই ভরসা করত। এখন সব কিছুই চায় দোকান থেকে কিনে নিতে। এই সময়টাতে একটু কাজ আসে, তাই যতটা সম্ভব কাজ সেরে নিতে চাই।”
চাকু, দা, বটি, চাপাতি—সবই তৈরি হচ্ছে এখন। পাশাপাশি পুরোনো দা-বটির শান দিতেও আসছেন ক্রেতারা। দামও কিছুটা বেশি। চাকুর দাম ৩০০–৪০০ টাকা, দা ১২০০–২০০০ টাকা, কেজি দরে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে। পুরোনো ছুরি বা বটি শান দিতে লাগছে ১০০–২০০ টাকা পর্যন্ত।
কামারপাড়ায় সরঞ্জাম কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, “গত বছর যে দা ১২০০ টাকায় কিনেছিলাম, এবার সেটা ১৬০০ চাইছে। লোহার দাম বেড়েছে, তাই কামাররাও দাম একটু বাড়িয়েছে।”
তবে অনেকেই বলেন, দাম বাড়লেও হাতে তৈরি যন্ত্রপাতির ধার ও স্থায়িত্ব বেশি, তাই এসব সরঞ্জাম কিনতেই কামারপাড়ায় ছুটে আসেন।
কামার পেশাটি এক সময় গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এখন সেই কদর কমে গেলেও ঈদুল আজহার মতো উৎসব সামনে এলে আবারও যেন ফিরে আসে পুরোনো দিনের আমেজ।
মানিকগঞ্জ শহর ও আশপাশের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কামাররা একটানা কাজ করছেন। কামারপাড়াগুলো টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে। কারও কারও চোখে আনন্দ, আবার কারও চোখে টিকে থাকার লড়াই।
ঈদের এখনও বেশ কিছুদিন বাকি থাকায় ক্রেতার চাপ এখনো তেমন বাড়েনি। তবে কামাররা বলছেন, শেষ মুহূর্তে ভিড় বেড়ে যাবে। তাই আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
মানিকগঞ্জের কামাররা হয়তো আলোচিত হন না, কিন্তু তাঁদের তৈরি করা সরঞ্জাম ছাড়া ঈদুল আজহার প্রস্তুতিও অপূর্ণ থেকে যায়। ঘাম, আগুন, লোহা আর টুংটাং শব্দ—এই নিয়েই যেন গড়ে উঠেছে ঈদের এক অনন্য প্রস্তুতির গল্প।
সাব্বির