
ছবিঃ সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, "কে ক্ষমতায় যাবে বা থাকবে, কিংবা কে কোন পরাশক্তিকে তুষ্ট করছে—এসব রাজনৈতিক আলোচনার চেয়েও জরুরি বিষয় হলো মানবিক সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা।"
তিনি বলেন, "রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি এখন মানবিক করিডরের মতো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাওয়ার বিষয়। সেখানে কারা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটাই মুখ্য। যদি বাংলাদেশ সরকার ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কোনো ঐকমত্যে পৌঁছায়, তবুও বাস্তবতা হলো—সেখানে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না।"
তিনি জানান, এ কারণে জাতিসংঘকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। "বাংলাদেশ কেবল লজিস্টিক সহায়তা দিতে রাজি। কিন্তু সেখানে গিয়ে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের দ্বারা ত্রাণ বিতরণ সম্ভব নয়। ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব, ব্যবস্থাপনা কার হাতে থাকবে—এসব বিষয়ে জাতিসংঘকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "রাখাইনে শুধু রোহিঙ্গা নয়, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও আছে। সেখানে দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক মানুষ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে পারে। সেটাও আমাদের জন্য ঝুঁকি। সে কারণে যদি জাতিসংঘ সেখানে রিলিফ পৌঁছে দিতে পারে, তবে কিছুটা চাপ কমানো সম্ভব।"
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, “সম্প্রতি বিমসটেকের আলোচনায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ফরেন মিনিস্টার ও ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার এক যৌথ প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরার জন্য উপযুক্ত হিসেবে ভেরিফাই হয়েছে। খলিলুর রহমান সাহেব এ কথা জানিয়েছেন। তবে এটি যে তাদের বাস্তব প্রত্যাবাসন শুরু—তা বলা যায় না। যুদ্ধাবস্থায় কাউকে জোর করে পাঠানো যায় না। এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু।”
তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি ঘটনাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, যার প্রতিক্রিয়া আমরা ঠেকাতে পারিনি। বিএনপি মহাসচিব এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেটি ইতিবাচক। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে এ ধরনের বিষয়ে তাদের কনসার্ন থাকা উচিত।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন—চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকারের যারা দায়িত্বে আছেন, তারা অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নন। তারা রাজনৈতিক চর্চা থেকে আসেননি। ফলে প্রশাসনিক দক্ষতার কিছু ঘাটতি স্বাভাবিক। তবে তা মানেই নয় যে নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি দরকার। প্রস্তুতি না থাকাটা আত্মঘাতী হবে।”
সাবেক নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় সংকট হলো, অনেক চেয়ারম্যান-মেম্বার পলাতক। স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলো কার্যত শূন্য। এসব সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা আছে।”
অর্থনৈতিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি পার করছে। রিজার্ভ কিছুটা উন্নতির দিকে। ব্যাংকিং খাতেও কিছু আস্থা ফিরছে। তবে এই অবস্থায় নির্বাচিত সরকার গঠনের দাবি অস্বীকার করা যায় না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে—যেখানে প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।”
তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/v/18WaWMChUK/
মারিয়া