ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

বিপিএমসিএ’র গোলটেবিল বৈঠক

মশা নিধনে ওষুধ প্রয়োগে বৈষম্য হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

মশা নিধনে ওষুধ প্রয়োগে বৈষম্য হচ্ছে

ডেঙ্গু মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ

ডেঙ্গু মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সর্বত্র সাধারণ মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের অভিজাত এলাকাতেই শুধু নিয়মিত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনের স্প্রে করা হলেও অনুন্নত এলাকা এবং বস্তিতে কোনোপ্রকার স্প্রে করা হয় না। করা হলেও সেটা দেখা যায় হঠাৎ হঠাৎ। এমনকি অনুরোধ করলেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। 
রবিবার ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতামূলক আলোচনা ও গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিযোগ করা হয়। এর সমাধান হিসেবে দ্রুত বাংলাদেশে টিকা এনে তা চালু করার জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য ও প্রতিরোধ গড়ার লক্ষ্যে কি কি করণীয়, সে বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) উদ্যোগে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় সিরডাপ অডিটরিয়ামে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার ও বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। বিপিএমসিএ’র সভাপতি এম এ মুবিন খান এতে সভাপতিত্ব করেন। 
ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। বিশেষ করে গ্রীষ্মম-লীয় এবং উপ-গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ। এই রোগটি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হালকা ফ্লু থেকে গুরুতর এবং সম্ভাব্য মারাত্মক অবস্থা পর্যন্ত নানারকম উপসর্গ উপস্থাপন করে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং পেশীতে ব্যথা, ফুসকুড়ি এবং হালকা রক্তপাত। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে অগ্রসর হতে পারে, উভয়ই সময়মতো চিকিৎসকের হস্তক্ষেপ ছাড়া জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি হতে পারে।
বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার জানান, ডেঙ্গু জ্বরের নির্ণয় সাধারণত রোগীর ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অঞ্চলে এক্সপোজারের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। পাশাপাশি রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মতো ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলোও রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য অনুসারে, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে ৪৬৫ জন মারা গেছে এবং বছরের শুরু থেকে ৯০ হাজার ৭৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। 
এর প্রতিকার হিসেবে তিনি মশার সংখ্যা কমানোসহ মশার সংস্পর্শ হ্রাস করার ওপর জোর দেন। এজন্য তিনি প্রজনন স্থান নির্মূল, মশা নিরোধক এবং জাল ব্যবহারসহ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচার এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, নিয়মিতভাবে জলের পাত্রগুলো খালি করা এবং পরিষ্কার করে সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি ব্যবহার করা এবং সঠিক নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। এর সঙ্গে পোকামাকড় নিরোধক মশারি ব্যবহার করা বিশেষ করে শিশুদের মশারির নিচে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতাই একমাত্র সামাধান বলে অভিহিত করেন। এজন্য ব্যাপক প্রচার ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাগিদ দেন। বিপিএমসিএ’র সভাপতি এম এ মুবিন খান জানান, জনসচেতনতা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি সপ্তাহব্যাপী একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন বাজার এলাকাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা।

×